তার এমন অভাবনীয় সাফল্যে শুধু পরিবার নয়, তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরিশালের হিজলা উপজেলার পূর্ব পত্তণীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও উৎফুল্ল।
বিদ্যলয়ে প্রধান শিক্ষিকা নাছিমা খানম বলেন, ‘অবশেষে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। মুক্তামনি পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। আমরা আশা করি সামনের দিনগুলো তার আরো ভালোভাবে কাটবে এবং ভবিষ্যত উজ্জল হবে।’
তিনি জানান, ফলাফল পাওয়ার পর মুক্তামনি ও তার পরিবারের সাথে কথা হয়েছে। সে তারা এখন দারুণ খুশি। এখন বৃত্তি পাওয়ার আশায় রয়েছেন তারা।
মুক্তামনির পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুদিন পর তার দাদী মারা যাওয়ায় এখন মায়ের সাথে ঢাকার সাভারে রয়েছেন। তাই সেখানকার একটি স্কুলে ভর্তি হয়েছেন মুক্তামনি।
প্রধান শিক্ষিকা জানান, পূর্ব পত্তণীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবারে ১৪ জন শিক্ষার্থী পিইসি পরীক্ষা দিয়েছিল। এদের মধ্যে মুক্তার দুটি হাত না থাকায় পা দিয়েই লিখছে সে। ওর সেই লেখাও অন্যদের হাতের লেখা চেয়ে অনেক সুন্দর। আর একমাত্র মুক্তাই ১৪ জনের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে।’
মুক্তামনির স্বজনরা জানান, শুরুতে সে গ্রামেই থাকতো। মা ঝুমুর বেগমের গার্মেন্টে চাকরির সূত্রে বছর দুয়েক আগে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন ঢাকার সাভারে যায় সে। সেখানেই একদিন পাখি ধরতে গিয়ে দুই হাত দিয়ে বৈদ্যুতিক তার চেপে ধরে মুক্তা। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে তার দুই হাত বিকল হয়ে যেতে শুরু করে। চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রথমে কনুই থেকে দুটি হাত কেটে ফেলা হলেও ক্ষত ঠিক না হওয়ায় এক পর্যায়ে পুরোপুরি দুটো হাতই শরীর থেকে বাদ দিতে হয়।
এরপর পত্তনীভাঙ্গ গ্রামে দাদী জাহানারা বেগমের কাছে থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলে পুনরায় পড়াশোনা করতে চায় মুক্তা। তার ইচ্ছেতেই ২০১৮ সালে বাবা সেন্টু মিয়া ও মা ঝুমুর পূর্ব পত্তণীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করেন মুক্তামনিকে।
নতুন স্কুলজীবনের শুরু থেকেই ডান পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে কলম দিয়ে লেখার অভ্যাস করতে থাকে মুক্তা। আর এখন হাতে লেখা যে কারো মতো স্বাভাবিক গতিতেই পা দিয়ে অনায়াসে লিখে যেতে পারে সে।
মুক্তামনির চিকিৎসাসহ আরো এক বোনের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে তার হতদরিদ্র পরিবার। তবুও মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করতে চান মা। মুক্তামনির স্বপ্ন একদিন সে শিক্ষক হবে।
প্রধান শিক্ষিকা জানান, মুক্তামনি এতোটাই ভালো ছাত্রী যে, সে কখনো বিনা কারণে স্কুলে অনুপস্থিত থাকেনি। সে নিজের যে কোনো সমস্যা খাদিজা বেগম নামে এক শিক্ষিকার সঙ্গে আলোচনা করে নিতো।