আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের জনপ্রশাসনে বড় ধরনের অস্থিরতা ও কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। বছরের শেষের দিকে আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব তীব্র হওয়ায় এখনও বিশৃঙ্খলার অবসান হয়নি।
পদোন্নতি, পোস্টিং এবং পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে বঞ্চিত হওয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং অন্যান্যদের নিয়োগের বিষয়গুলো গত চার মাস ধরে আলোচনায় ছিল এবং অনেক সিদ্ধান্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সর্বশেষ বিতর্কটি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরে উঠেছে। এটি উত্থাপনের পর সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে সরকারি সেবা সহজীকরণের জন্য কমিশন গঠন করা হলেও এটি এখন কর্মকর্তাদের নিজস্ব স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে।
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে রবিবার প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমনকি প্রতিবাদে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাইরে কয়েকশ’ কর্মকর্তা বিরল বিক্ষোভ করেন।
অন্যান্য ২৫টি পদের ক্যাডারের প্রতিনিধিত্বকারী ইন্টার-ক্যাডার ডিসপারিটি রেজ্যুলিউশন কাউন্সিল, মানববন্ধন ও সমাবেশসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
খসড়া প্রস্তাবে উপসচিব পদের ৫০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং বাকি ৫০ শতাংশ অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে বণ্টনের সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে এসব পদের ৭৫ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের জন্য এবং ২৫ শতাংশ অন্যান্য পদের জন্য সংরক্ষিত।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে বিশৃঙ্খলা
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারেনি।
ঘন ঘন বদলি আদেশ বাতিল এবং পোস্টিংয়ে অসঙ্গতির মতো বিশৃঙ্খলার ঘটনাগুলো সমন্বয়ের অভাবেরই বহিঃপ্রকাশ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পূর্ববর্তী সরকারের আমলে করা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেছে। পরে সরকার ১৪টি মন্ত্রণালয়ে চুক্তিভিত্তিক সচিব নিয়োগ দেয়।
গত সাড়ে চার মাসে কোনো কর্মকর্তাকে বদলি করে আবার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে। তদবির করে কেউ কেউ বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। আবার সমন্বয়হীনতার কারণে বদলির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হচ্ছে সরকারকে। এতে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে।
প্রশাসনিক তৎপরতায় ধীরগতি
চলমান বিঘ্নের কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর হয়ে পড়েছে।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগতে পারে।
গণপদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত চার মাসে ৫৩৭ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৩ জন সচিব, ১৭ জন গ্রেড-১, ১৩৫ জন অতিরিক্ত সচিব, ২২৮ জন যুগ্ম সচিব এবং ১৩৪ জন উপসচিব রয়েছেন।
এখন এসব পদোন্নতির মানদণ্ড নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও দুর্নীতির অভিযোগে উঠেছে।
গ্রেপ্তারের ভয় ও অনিশ্চয়তা
গত চার মাসে সাবেক সচিবসহ ১২ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর ফলে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা আরও বেড়েছে।
সচিবের পদ শূন্য হওয়ায় ব্যাহত কার্যক্রম
স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সেতু বিভাগ- এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সচিববিহীন থাকায় তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিচালনায় বিঘ্ন হচ্ছে।
সংস্কার কমিটি আগেই 'বঞ্চিত' ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে সচিব পদে ১১৯ জনসহ বিভিন্ন পদে পদোন্নতির সুপারিশ করেছে।