সম্প্রতি মার্কিন ডলারের দাম বাড়ায় বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কিনতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি) অতিরিক্ত ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করতে হবে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের (আইপিপি) কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য বিপিডিবির বার্ষিক ব্যয় ধরা হয়েছিল মোটামুটি ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। সেই ব্যয় এখন বেড়ে প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে জানান প্রাক্কলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ক্রলিং পেগ পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার রেট বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কারণে বিপিডিবি বেশ বড় রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
গত ৮ মে ক্রলিং পেগ এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেম উন্মোচন করে ব্যাংকগুলোকে ১১৭ টাকার কাছাকাছি রেটে অবাধে মার্কিন ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি স্মার্ট রেটের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ছেড়ে দেয় এবং রেপো রেট বাড়ায়।
আরও পড়ুন: 'ডলার সংকট' অযুহাতে দাম বাড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা
এ পদ্ধতিতে প্রতি মার্কিন ডলারে ক্রলিং পেগ মিড রেট (সিপিএমআর) নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, তফসিলি ব্যাংকগুলো সিপিএমআরের আশপাশে গ্রাহকদের সঙ্গে এবং আন্তঃব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে অবাধে ইউএস ডলার কেনা-বেচা করতে পারবে।
একটি ক্রলিং পেগ সিস্টেম হচ্ছে বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি, যা একটি মুদ্রার নির্দিষ্ট বিনিময় হার একটি নির্দিষ্ট সীমায় বেশ কয়েকটি হারের মধ্যে ওঠানামা করে। এটি স্থির ও ভাসমান বিনিময় হারের একটি সমন্বিত পদ্ধতি।
বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘আইপিপিএসের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) পেমেন্ট হয় মার্কিন ডলারে। তাই ডলারের রেট বাড়লে আমাদের বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।’
আরও পড়ুন: খোলা বাজারে ডলার সংকট, দাম বেড়ে ১২৫ টাকায় উন্নীত
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, ডলারের দাম একবারে ৭ টাকা বেড়ে ১১০ টাকা থেকে ১১৭ টাকা হওয়ায় এ বছর বিপিডিবির ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের লোকসান কমাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যখন বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনার ওপর জোর দিচ্ছে, তখন ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা পরিশোধের অতিরিক্ত বোঝা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিপিডিবিকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১২ টাকার বেশি ব্যয় করতে হয়, যেখানে গড় বিক্রয় হার প্রায় ৮ টাকা ৯৫ পয়সা এবং ইউনিট প্রতি ৩ টাকার বেশি খরচ হবে।
বিপিডিবির আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘আর্থিক ক্ষতি কমাতে আইএমএফ বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়াতে বিপিডিবিকে চাপ দিয়ে আসছে। এখন ডলারের দর বাড়ানোর পর আর্থিক ক্ষতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে।’
আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার চাপ সত্ত্বেও বিপিডিবি শিগগিরই দাম বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, 'বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিপিডিবি ডলারের সুদের হার বাড়ার প্রভাব নিয়ে হিসাব-নিকাশ করছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সরকারের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।’
বিপিডিবির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিদ্যুৎ খাতে একক ক্রেতা হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন ব্যয় ছিল ৯৩ হাজার ৭৯৭ টাকা ৩৭ পয়সা।
আরও পড়ুন: তৃতীয় কিস্তির ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ পেতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জোর আইএমএফর