সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকতে হয় সাধারণ মানুষকে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় যানজট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, অনেক জায়গায় চলাচলই প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শুধু যানবাহন নয়, পথচারীরাও রাস্তায় নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছেন না।
শহরবাসীর অভিযোগ, ইজিবাইক ও রিকশার দৌরাত্ম্য এখন চরমে পৌঁছেছে, অথচ ট্রাফিক পুলিশ কার্যত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পৌরসভার ভূমিকা নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
সম্প্রতি লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে অভিযান শুরু হলেও শ্রমিক আন্দোলনের মুখে তা অনেকটা স্থবির হয়ে গেছে।
শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, অনুমোদিত ইজিবাইক ও রিকশার সংখ্যার তুলনায় বাস্তবে চলছে কয়েকগুণ বেশি যানবাহন। এসবের বড় একটি অংশ আসে আশপাশের উপজেলা থেকে। অনটেস্ট মোটরসাইকেলও চলছে অবাধে।
ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম মূলত মোটরসাইকেলের কাগজপত্র পরীক্ষা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। শহরের রাস্তায় কিশোর চালকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো এখন নিত্যদিনের দৃশ্য।
পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী, যশোর শহরে বৈধ ও অবৈধ মিলে সাত হাজার ৭৬৮টি যানবাহন রয়েছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, বাস্তবে এই সংখ্যা তার চেয়েও বহুগুণ বেশি। সবচেয়ে বেশি দৌরাত্ম্য ইঞ্জিনচালিত অটোরিকশার।
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের দড়াটানা মোড়, জেলরোড, মুজিব সড়ক, গাড়িখানা রোড ও মাইকপট্টি এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। দুপুরের দিকে দড়াটানা মোড়ে প্রায়ই যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ট্রাফিক পুলিশকে সেখানে চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। পাশাপাশি শহরের চৌরাস্তা, মণিহার, আরএন রোড, বড়বাজার, কাঠেরপুল ও চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়ও একই পরিস্থিতি দেখা যায়।
রানা হোসেন নামে এক পথচারী বলেন, ‘শহরে এখন নিয়ম-শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। রিকশা ও ইজিবাইকের দৌরাত্ম্যে পায়ে হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়েছে। যে যেমন খুশি রাস্তায় চলছে, ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কার্যত শূন্য’।
মিতা রহমান নামে এক নারী জানান, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড থেকে কুইন্স হাসপাতাল পর্যন্ত আসতে প্রায় আধাঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে। শেষে বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে গরীবশাহ রোডে যেতে হয়েছে। কিন্তু ফুটপাত দখল থাকায় সেটিও কষ্টকর ছিল।
শফিকুল ইসলাম নামে আরেক পথচারীর মতে, দড়াটানা মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ দড়ি টেনে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে বটে, কিন্তু এতে উল্টো আরও জট তৈরি হয়েছে। নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতা চলছে, এতে চলাচল আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে, শহরে চলাচলকারী অনেক ইজিবাইক ও রিকশা চালক স্বীকার করেছেন, তারা শহরের বাইরের এলাকা থেকে প্রতিদিন ভোরে আসেন এবং রাতে ফিরে যান। জীবিকার তাগিদেই তারা নিয়ম না মেনে শহরে প্রবেশ করেন।
হারুণ নামে এক অটোরিকশা চালক বলেন, ‘যানজট হলে শুধু যাত্রী নয়, আমাদেরও কষ্ট হয়। দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় যাত্রী কমে যায়, আয়ও কমে যায়। গাড়ির চার্জও শেষ হয়ে যায়।’
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান বলেন, শহরে যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো প্রয়োজন। তারপরও ট্রাফিক পুলিশ শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে।
যশোর পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসান বলেন, লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে, এমন অভিযোগ পুরোপুরি সঠিক নয়। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর আবার অভিযান শুরু হবে। তিনি নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও সচেতন মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি পৌরসভা লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশা বন্ধে অভিযান শুরু করলে শ্রমিকরা বিক্ষোভে নামে। প্রধান রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠনের সংহতি ঘোষণার পর জেলা প্রশাসন আপাতত অভিযান স্থগিত রাখে। ফলে শহরে যানজট পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।