বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ওঠানামার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের রিজার্ভ গণনায় বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে ভিন্ন ভিন্ন পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে।
এতে ব্যবসায়ী ও ভোক্তা উভয়ই এই রিজার্ভের বৈচিত্র্যতায় বাড়তি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে।
ঢাকার মগবাজারে কর্মরত ভোলার বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সী ইলেকট্রিশিয়ান আলম জানান, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তাকে সার্ভিস চার্জ অনেক বাড়াতে হয়েছে। আলম বলেন, 'খাবারের দাম, ইউটিলিটি বিল বেড়ে যাওয়ায় কেউ ৫০০ টাকার নিচে অফার করলে আমরা সেবা দিই না।’
একইভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ভাড়া বাড়িয়েছেন জামালপুরের রিকশাচালক একাব্বর আলী। তিনি বলেন, ‘খাবার, ওষুধ ও বিল দাম বেড়েছে। রিকশার ভাড়া না বাড়ালে আমরা বাঁচতে পারব না।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে
মগবাজারের মুদি ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান একই সুরে বলেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণ দেখিয়ে সরবরাহকারীরা সপ্তাহে কয়েকবার দাম বাড়িয়েছেন। ফলে খুচরা দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্চ ও এপ্রিলের জন্য এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের আর্থিক দায় সমন্বয়ের পর ১৪ মে পর্যন্ত মোট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পদ্ধতিতে বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ১৮ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের কম, যেখানে প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ ১৩ বিলিয়ন ডলারের সামান্য কম। এই পরিসংখ্যানগুলোতেই মূল রিজার্ভের পরিমাণ সম্পর্কে জানা যায়। আইএমএফের পদ্ধতিতে স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস (এসডিআর) হিসাবে রাখাসহ বিভিন্ন আর্থিক দায় বাদ দেয়।
আরও পড়ুন: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে ও মূল্যস্ফীতি কমাতে মুদ্রা সংস্কার জরুরি: বিশ্বব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ না করলেও আইএমএফের সাবেক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর আশ্বস্ত করে বলেন, মোট রিজার্ভ এখনও ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা এই মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে ইঙ্গিত দেয়। তবে তিনি মুদ্রাবাজার এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক দৃশ্যপটে আস্থা নিয়ে চলমান উদ্বেগের কথা স্বীকার করেছেন।
ড. মনসুর অনিয়ন্ত্রিত অর্থ পাচারের হুমকিকে অস্থিতিশীলতার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দা বা দুর্যোগ মোকাবিলায় অপর্যাপ্ত রিজার্ভের ঝুঁকির ওপর জোর দিয়েছেন।
ডলারের এই ঘাটতি ও সৃষ্ট অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। একারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: তৃতীয় কিস্তির ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ পেতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জোর আইএমএফর