সেই সাথে, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নেতৃত্বে দলটির যেসব জ্যেষ্ঠ নেতারা নির্বাচনে দলের অংশ নেয়ার বিষয়ে বিরোধীতা করেছিলেন, তারা এখন সিটি নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার এ সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন।
এখনই নির্বাচন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য দলীয় নীতিনির্ধারকদের চাপ দিয়ে যাচ্ছেন তারা।
তবে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা যারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন, তারা মনে করেন, দুটি সিটি করপোরেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে অংশ না নিলে বিভিন্ন মহল ও দলের তৃণমূল থেকে তাদেরকে অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হবে।
তারা আরও বলেছেন, নির্বাচনে ব্যালট বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) যাই ব্যবহার করা হোক না কেন, চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচন আবারো প্রমাণ করেছে যে বর্তমান সরকার এবং ইসির অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।
সকল প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে ভোটারদের নির্বাচনে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করা এবং ভোট কেন্দ্রে দলের এজেন্টদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের কৌশল নিয়ে দলটি এখন কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা।
বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচন যদি স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য না হয় তবে আগামীতে যে কোনো নির্বাচনে দলটি অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকবেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।
চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে গত সোমবার বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোসলেম উদ্দিন আহমেদ।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নেয়া এ নির্বাচনে মোট ২৩ শতাংশ ভোট পড়েছে।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবু সুফিয়ান অভিযোগ করেন, ‘ইভিএম মেশিনে আঙ্গুলের পাঞ্চ নিয়ে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নৌকায় ভোট দিয়েছে। অস্ত্রের মুখে তারা ১৭০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২০টি কেন্দ্রই দখল করে নিয়েছিল।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ভোটারদেরকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া এবং ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে ভোট হলে তাদের দলীয় প্রার্থীই উপনির্বাচনে বিজয়ী হতেন। ‘উপনির্বাচনটি আবারো প্রমাণ করল বর্তমান সরকার এবং ইসির অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।’
চট্টগ্রামের উপনির্বাচন সিটি নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের অনিয়মের বিষয়ে কথা বলে আসছি। ‘নির্বাচন কমিশন এখনও পর্যন্ত ভোটদান প্রক্রিয়াকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’
তবে তিনি বলেন, আমরা ভোটারদের তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য ভোট কেন্দ্রগুলোতে যেতে এবং বিভিন্ন অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তাদেরকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ক্ষমতাসীন দলের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা চট্টগ্রাম উপনির্বাচনের সময় সব কেন্দ্র ‘দখল’ নিয়েছিল এবং ইভিএমের মাধ্যমে ভোট ‘কারচুপি’ করেছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফলাফলও একইভাবে নিজেদের পক্ষে নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। ‘আমি নিজেই নির্বাচন কমিশনে গিয়েছি এবং তারা ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার না করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু, আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে। ক্ষমতাসীনরা আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে, ভয় দেখিয়ে ভোটের আগে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মূলত দুটি কারণে- ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা এবং ইভিএম নিয়ে ভোটারদের অনাস্থা থাকায়- চট্টগ্রাম উপনির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল মাত্র ২৩ শতাংশ।
তিনি বলেন, ‘জনগণ মনে করে ইভিএম ব্যবহার করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এ কারণেই তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে কম আগ্রহ দেখিয়েছেন। এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। ভোটাররা যদি ভোট কেন্দ্রে না যান তবে কীভাবে সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন।’
মোশাররফ বলেন, ভোটারদের ভোট দেয়ার বিষয়ে উৎসাহিত করতে ইসির সিটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য বলেন, চট্টগ্রাম উপনির্বাচন দলীয় নীতিনির্ধারকদের সজাগ হওয়ার বার্তা দিয়েছে। সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন এ নির্বাচনও গত সোমবারের নির্বাচনের মতোই হবে।