অভিযোগ রয়েছে, ওই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবার সিলেট শহরের বাসা থেকে এসে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন দেরিতে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা একেবারেই কম হওয়ার অজুহাতে দুপুর হলেই ছুটি দিয়ে দেয়া হয় বিদ্যালয়।
আলোচিত এই বিদ্যালয়টির নাম কচরাকেলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের কচরাকেলী গ্রামে বিদ্যালয়টি অবস্থিত।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ৩০ শতক জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন আবদুল মতিন চৌধুরী নামে একজন শিক্ষানুরাগী। ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। বিদ্যালয়ের সামনে পরিত্যক্ত ভবন থাকায় নেই পর্যাপ্ত খেলাধুলা, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন বা সমাবেশের জায়গা। বিশুদ্ধ পানির সংকটতো রয়েছেই।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় জানান, প্রায় প্রতিদিনই দেরিতে বিদ্যালয়ে আসেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। এর পাশাপাশি প্রতিদিনই দুপুরে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেয়া হয়।
সরেজমিনে গিয়ে কচরাকেলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির এসব অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
সম্প্রতি বেলা দেড়টার দিকে বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা যায়, অফিস কক্ষসহ পুরো বিদ্যালয়ই তালাবদ্ধ। এর আগেও একাধিকবার দুপুরে গিয়ে বিদ্যালয়টি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। ওইদিন দুপুরে সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি জানতে পেরে দুজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে ছুটে আসেন সহকারী শিক্ষক গীতা দে।
অসময়ে বিদ্যালয় ছুটি দেয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে শিক্ষক গীতা দে বলেন, ‘আমার শাশুড়ি অসুস্থ থাকায় ছুটি দিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছিলাম। আপনাদেরকে দেখে ফিরে এলাম।’
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কোথায় জানতে চাইলে শিক্ষক গীতা বলেন, ‘বিদ্যালয়েরই কাজে তিনি বর্তমানে বল্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আছেন।’
এ সময় তিনি ফোনে যোগাযোগ করলে প্রায় আধাঘণ্টা পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুক্তা রায় বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন। কথা হয় তার সাথে।
অসময়ে বিদ্যালয় ছুটির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। তবে, প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে দেরি করে আসা ও দুপুরেই বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেয়ার অভিযোগটি সঠিক নয় বলে জানান শিক্ষক মুক্তা রায়।
তিনি আরও জানান, কচরাকেলী গ্রামে জনসংখ্যা তুলনামূলক কম হওয়ায় ও আশপাশে আরও কয়েকটি বিদ্যালয়-মাদরাসা থাকায় এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম।
এদিকে সংবাদকর্মীরা যখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলছেন, ঠিক সে সময়ে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে উপস্থিত হয়েই তাদের সাথে রূঢ় ভাষায় কথা বলা শুরু করেন পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম। বিদ্যালয় সংক্রান্ত কোনো তথ্য ও বক্তব্য দেয়া যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে (বিদ্যালয়ে) সাংবাদিক নিষিদ্ধ। আপনারা কার অনুমতিতে এখানে এসেছেন?’
অপরদিকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছাইম উল্লাহর সাথে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, বিদ্যালয় ছুটি দেয়ার কারণে দুই শিক্ষককে শোকজ করা হবে। শিগগিরই বিদ্যালয় পরিদর্শন করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কামরুজ্জামান বিষয়টি জানা নেই উল্লেখ করে বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখছি।’