বাগেরহাটে বিভিন্ন নদী পাড়ে বসতি গড়ে তোলা কয়েক হাজার মানুষ যুগযুগ ধরে ঝুঁকির মধ্যে বাস করছেন। নদী পাড়ে বেড়িবাঁধ না থাকায় এসব মানুষের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেলে খুব সহজে জেলার রামপাল, মোংলা ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলার একাংশ প্লাবিত হয়। সেইসঙ্গে মানুষের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ে। যেসব এলাকায় বাঁধ রয়েছে তার উচ্চতা তুলনামূলকভাবে কম।
এ কারণে জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেলে অধিকাংশ এলাকায় বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। আর ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হলে নদী পাড়ের মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।
ঘূর্ণিঝড় ‘রিমালের’ খবরে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাদের শঙ্কা মুক্ত করতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় নুতন করে ১৮৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। আর যে সব এলাকায় বাঁধ রয়েছে তার মধ্যে ১৬ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
জেলার মানুষকে দুর্যোগকালীন সময়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫১ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানানো হয়।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় ভারত: হাইকমিশনার
জানা গেছে, প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সুপার সাইক্লোন সিডর, আইলা, আম্পান, মোরা, বুলবুল ও ফণীসহ বিভিন্ন সময়ের ঝড়-জলোচ্ছ্বাস বাগেরহাটের নদী পাড়ের বাসিন্দাদের আতঙ্কিত করে রেখেছে। দুর্যোগে কেউ কেউ তার স্বজন আর সহায় সম্পদ হারিয়েছেন।
যে কোনো সময়ে দুর্যোগ আসতে পারে জেনেও জেলার শরণখোলা, রামপাল, মোড়েলগঞ্জ এবং মোংলা উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ এখনও নদী পাড়ে বাস করছে। বিশেষ করে রামপাল মোংলা এবং মোড়েলগঞ্জ উপজেলার একাংশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ নির্মাণ না করার কারণে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলেই লোকালয় প্লাবিত হয়। পানি ঢুকে পড়ে মানুষের বাড়ি ঘরে। পানিতে মানুষের সহায় সম্পদ ভেসে যায়। সহায় সম্পদ আর স্বজন হারানো মানুষগুলোকে দুর্যোগ আতঙ্কিত করে রেখেছে।
সিডরের পর নদী পাড়ের মানুষগুলোর একটাই দাবি ছিল টেকসই বাঁধের। কিন্তু আজও উপকূলবর্তী এলাকা টেকসই বাঁধের আওতায় আনা যায়নি। এসব মানুষ দ্রুত নদী পাড়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছে।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে সিডরে ১৫ থেকে ১৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটের শরণখোলায় বলেশ্বর নদীর বেড়িবাঁধ ধ্বংস হয়ে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের গ্রামের পর গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে যায়। শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সের নারী-পুরুষ, ঘরবাড়ি,গবাদি পশু, মাছধরার জাল ও নৌকা পানিতে ভেসে যায়।
শুধু শরণখোলা উপজেলা নয় জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় নদী পাড়ের ১০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেসে গেছে। সরকারি হিসাবে- শুধুমাত্র শরণখোলা উপজেলায় সিডরের তাণ্ডব ও জলোচ্ছ্বাসে ৭০৯ জন নারী, পুরুষ ও শিশুর প্রাণহানীর কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে: বিএমডি