উপজেলার মীরাপাড়া গ্রামের রেজাউল তার দেড় বিঘা জমিতে সৌদি আরবের জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু ফল সাম্মাম চাষ করেছেন। ফলটি দেখতে অনেকটা সাদাটে বেল কিংবা বাতাবি লেবুর মতো। ভেতরে লাল তরমুজের মতো রসালো। সৌদি আরব অবস্থানকালে রেজাউল সাম্মাম খেয়েছেন। দেশে ফেরার পর তিনি এ রসালো ও সুস্বাদু ফল চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। অবশেষে বগুড়ায় এগ্রো ওয়ান নামে এক কৃষি গবেষণা খামারে সাম্মাম ফলের চারার সন্ধান পান। ওই খামারে এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করেন রেজাউলের ভাতিজা কৃষিবিদ মো. সামিউল ইসলাম। সেই সুবাদে চারার সন্ধান লাভ।
সেখান থেকে চারা এনে প্রাথমিকভাবে নিজের দেড় বিঘা জমিতে সাম্মাম চাষ করেন রেজাউল। দেড় বিঘা জমি চাষ দিয়ে তৈরি, চারা ক্রয়, জাংলা তৈরি, কীটনাশক, শ্রমিক ইত্যাদি বাবদ সর্বমোট খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। মাত্র তিন মাসের মধ্যে এ ফল উৎপাদন এবং বাজারজাত করা সম্ভব হয়েছে। এ সময়ে রেজাউল সব খরচ বাদ দিয়ে কমপক্ষে তিন লাখ টাকা আয় করেছেন। চার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এগ্রো ওয়ানের মাধ্যমে বাজারজাত করাও সহজ হয়েছে। বগুড়া হয়ে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে তিনি এসব ফল বিক্রি করছেন।
রেজাউল জানান, জমিতে প্রায় ২ হাজার ফল উৎপাদিত হয়েছে। প্রতিটি ফল ২ থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত ওজনের হয়েছে। বিক্রি ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দেখতে আসা দর্শনার্থী এবং আত্মীয়দের নতুন ফল হিসেবে এসব খেতে দিয়েছেন। তারপরও সব খরচ বাদ দিয়ে নীট লাভ করেছেন তিন লাখ টাকা।
‘মাত্র তিন মাসে দেড় বিঘা জমি থেকে তিন লাখ টাকা আয় করা অন্য কোনো ফসল উৎপাদন করে সম্ভব নয়। কাজেই সাম্মাম চাষ অত্যন্ত লাভজনক,’ বলেন তিনি।
তিনি জানান, বিদেশি এ নতুন ফল দেখতে, খেতে এবং কিনতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর সংখ্যক দর্শনার্থী আসছেন। তারা লাভের গল্প শুনে নিজেরাও সাম্মাম চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।
রেজাউল একই খরচে সাথী ফসল হিসেবে সাম্মাম চাষের পাশাপাশি পৃথক কয়েকটি জাংলায় করলা এবং ঝিঙ্গে চাষ করেছেন। এসব বিক্রি করে তিনি অতিরিক্ত আরও ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করেছেন বলে জানান।
কৃষিবিদ সামিউল ইসলাম জানান, ধানসহ গতানুগতিক ফসল উৎপাদন এখন আর লাভজনক নয়। তাই কৃষকরা প্রথাগত ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এ করোনা পরিস্থিতিতে কীভাবে কৃষকদের লাভজনক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সাম্মামের চারা উৎপাদন করে দেশব্যাপী এ ফসল উৎপাদনে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিদেশি সুস্বাদু এ লাভজনক ফল উৎপাদনে তারা কৃষকের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রবিয়াহ নুর আহম্মেদ বলেন, বাংলাদেশে বিশ্বের উন্নত বিভিন্ন দেশের ফুল ও ফসল চাষ করে জনপ্রিয় করে তুলছেন কৃষকরা। এতে একদিকে আর্থিকভাবে যেমন লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে এসব বিদেশি ফল-ফসলের স্বাদ ও পুষ্টি গ্রহণ করে উপকৃত হচ্ছেন এ দেশের মানুষ। আত্রাইয়ের কৃষক রেজাউল ইসলাম মরু অঞ্চলের জনপ্রিয় ফল সাম্মাম চাষ করে সফল হয়েছেন।
নওগাঁ এলাকায় সাম্মাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছেন বলে তিনি জানান।