প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরের সময় দেশটির রাজধানী বেইজিংয়ে একটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করবে বাংলাদেশ।
চলতি সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে এই বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন এবং দেশটির পক্ষে থাকা বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমানোর উপায় খুঁজে বের করবেন।
চীন ও বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক হাজারের বেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনার জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়িক অধিবেশনে যোগ দেবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, এই সফরে বাণিজ্য খাতকে সহায়তার জন্য ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চাইতে পারে বাংলাদেশ, যা চীন থেকে পণ্য আমদানির জন্য এলসি সহজতর করবে।
আরও পড়ুন: চীনে ৮-১০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর ঘোষণা বেইজিংয়ের
অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই) ও বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস যৌথভাবে এই বাণিজ্য সামিটের আয়োজন করবে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এ সপ্তাহে ইউএনবিকে বলেন, সামিটটি দুই দেশের ব্যবসায়ীদের একে অপরকে জানতে ও বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজে পেতে সবাইকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চীনের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন।
বিসিসিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন মৃধা ইউএনবিকে বলেন, চীনা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ ২০টি সম্ভাবনাময় খাত চিহ্নিত করেছে। বেইজিং ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিটে চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবসায়িক প্রস্তাবের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কথা তুলে ধরা হবে।
তিনি বলেন, চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে ৯৮ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধায় চীনের বাজারে পণ্য রপ্তানির সুবিধা পাবেন।
আল-মামুন উল্লেখ করেন, এই বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য ব্যবধান কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে এবং চীনা বিনিয়োগকারীরা এখানে কম খরচে উৎপাদনের সুযোগ পাবেন।
তিনি বিশ্বাস করেন, কিছু চীনা বিনিয়োগকারী তাদের উৎপাদন শিল্প বাংলাদেশে স্থানান্তর করবে। কারণ বাংলাদেশ চীনা পণ্যের একটি বড় বাজার।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বাণিজ্য খাতে ৭০০ কোটি ডলারের সহায়তা চাইবে, যা চীনের সঙ্গে বাণিজ্য জোরদারে সহায়ক হবে। বিষয়টি চীনা মুদ্রা ইউয়ানে হতে পারে, যাতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ইউয়ানে এলসি খুলতে পারেন।’
চীন ও বাংলাদেশ ইউয়ানের মাধ্যমে বাণিজ্য শুরু করতে সম্মত হলেও ইউয়ানের সহজলভ্যতার অভাবের কারণে বাংলাদেশ তা করতে পারেনি। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ বাণিজ্য ব্যবধান রয়েছে। এতে লেনদেনের জন্য চীনা মুদ্রায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ প্রধানত চীন থেকে শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক পণ্য আমদানি করে। এসবের কারখানা বাংলাদেশে স্থাপন করা যেতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার (চীনা কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী) আমদানি করে এবং বাংলাদেশ ১০০ কোটি ডলারেরও কম রপ্তানি করে।
চীনকে সিরামিক, চামড়া, ওষুধ, বৈদ্যুতিক গাড়ি, দামি গার্নেট ও গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি খাতে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: চীন-বাংলাদেশের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারে শেখ হাসিনার আসন্ন সফর: রাষ্ট্রদূত