কর ফাঁকি দূর ও কালো টাকার অধিকারী হওয়া রোধে বড় ধরনের কর ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এনবিআরের কর বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘হ্যাঁ, সব রাঘব বোয়ালদের (বড় অপরাধী) ধরার এটাই উপযুক্ত সময়।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় যেকোনো ধরনের কর ফাঁকিবাজদের রেহাই না দেওয়া নিশ্চিত করতে ভয়ভীতি বা পক্ষপাতিত্বের ঊর্ধ্বে উঠে নিয়ম-কানুন প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে এনবিআরের।
এর একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এনবিআর সম্প্রতি ব্যাংকগুলোকে তাদের রাজস্ব সম্মতি যাচাই-বাছাই করার জন্য পাঁচটি প্রধান ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর প্রধানদের ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত বিবরণ সরবরাহ করার জন্য অনুরোধ করেছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল করিমের আর্থিক লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।
যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে-২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে মেয়াদি আমানত, সঞ্চয় হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব, ক্রেডিট কার্ড, লকার এবং ভল্টের বিস্তারিত তথ্য।
রবিবার (২৬ আগস্ট) অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কালো টাকা তৈরির বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের ওপর জোর দেন।
জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর সম্প্রতি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি ঘোষণা করেন, 'আমাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার- আর কালো টাকা তৈরির কোনো সুযোগ থাকবে না।’
আরও পড়ুন: কালো টাকা সাদা করা 'অশোভন ও অগ্রহণযোগ্য': এনবিআর চেয়ারম্যান
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানও কালো টাকা সাদা করার পদ্ধতির নিন্দা জানিয়ে এটিকে 'অশালীন কাজ' এবং 'সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য' বলে অভিহিত করেছেন।
বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন বলেন, সরকার এই প্রথা বন্ধ করতে এবং অর্থ পুনরুদ্ধারে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে যে, কালো টাকার মালিক হওয়া রোধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বদ্ধপরিকর। এসব টাকা প্রায়ই হুন্ডির মতো পদ্ধতিতে বিদেশে পাঠানো হয়।
কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন যে তারা সরকার এবং এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছ থেকে নীতিগত নির্দেশনা পেয়েছেন।
কর নীতি অনুবিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা এই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করব।’
আরও পড়ুন: সালমান, আকবর সোবহানসহ ৫ ব্যবসায়ীর হিসাব তলব করেছে এনবিআর
তিনি স্বীকার করেছেন যে পূর্ববর্তী রাজনৈতিক সরকারগুলোর সময়, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের বিষয়ে অনুসন্ধান করা কঠিন ছিল।
পাঁচ শীর্ষ ব্যবসায়ীর তালিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে এ ধরনের কাজ অসম্ভব ছিল।
তিনি নিশ্চিত করেন ‘এখন তাদের রাঘব বোয়ালদের ধরার স্বাধীনতা রয়েছে এবং তারা এই সুযোগটি গ্রহণ করবেন।’
রাজস্ব আহরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কালকে এনবিআরের জন্য একটি প্রধান সুযোগ বলে অভিহিত করেন ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পালন করা এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুল মজিদ।
তিনি স্মরণ করেন, তার মেয়াদকালে এনবিআর ৪৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। যা সংস্থাটির ইতিহাসে প্রথম।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর থেকে৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর বাকি ৬১ হাজার কোটি টাকা আসবে অন্যান্য উৎস থেকে।
আরও পড়ুন: রাজস্ব বাড়াতে করজাল সম্প্রসারণের কথা ভাবছেন এনবিআরের নতুন চেয়ারম্যান