ঝালকাঠি জেলার গ্রামীণ জনপদগুলোর বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। সরকার তৈল জাতীয় ফসলের আমদানি নির্ভরতা হ্রাসের উদ্যোগের অংশ হিসেবে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে কৃষকদের নিয়ে সরিষা সূর্যমুখী ও তীল জাতীয় তেলের চাষাবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
এই প্রণোদনার আওতায় প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের চাষাবাদের জন্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। দুই বছর আগেও ঝালকাঠি জেলায় সর্বাধিক ৪০০ হেক্টরে সরিষার আবাদ হতো এবং এ বছর তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১০১৭ হেক্টর। জেলার ৪টি উপজেলার মধ্যে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ৩২০ হেক্টর ও নলছিটি উপজেলা ৩১৬ হেক্টরে সর্বাধিক সরিষার চাষ হচ্ছে। এছাড়া জেলার অন্য দুই উপজেলা রাজাপুরে ১৮৫ হেক্টর ও কাঠালিয়ায় ১৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এ বছর ভাল উৎপাদন হয়েছে বলে দাবি করছে জেলার কৃষক ও কৃষি বিভাগ।
আরও পড়ুন: এক বছরে সরিষার উৎপাদন বেড়েছে ৩০০০ কোটি টাকার: কৃষি মন্ত্রণালয়
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ বছর সরিষা চাষিদের মধ্যে ৬ হাজার কৃষককে ৬ হাজার বিঘা চাষের জন্য সার, বীজসহ প্রণোদনা সহায়তা দেয়া হয়েছে এবং জেলায় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরও ২৫০ বিঘা চাষের জন্য সম সংখ্যক কৃষকের মধ্যে ৬ মণ বিভিন্ন জাতের বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। কৃষি বিভাগ সব সময় কৃষকের পাশে রয়েছে।
এই জেলায় প্রধানত বারি-৯, বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-১৭ ও বারি-১৮ জাত, টরি-৭, বীনা-৪, ও বীনা-৫ এবং বিএডিসি-১ জাতের সরিষার চাষ হচ্ছে।
জানা যায়, বারি জাতের চেয়ে বীনা জাতের উৎপাদন একটু বেশি। তবে এই সকল জাতের হেক্টর প্রতি উৎপাদন গড় প্রায় ১ দশমিক ২৪ মেট্রিক টন। কৃষকরা এখন আর স্থানীয় জাতের সরিষার চাষ করেন না। কারণ, এর উৎপাদন হার হেক্টর প্রতি ১ টনেরও কম।
আরও পড়ুন: খুলনায় সরিষার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা
জেলার গ্রামাঞ্চলে ছোট ও বড় আকারে অপেক্ষাকৃত উচুঁ জমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সরিষার খেত। সরিষা চাষের কারণে কোন কোন এলাকা হলুদ ফুলের বাগানে পরিণত হয়েছে। তবে অনেক এলাকায় সরিষার খেতে ফুল ঝড়ে ফলন ধরেছে। কোনো কোনো সরিষার খেতে ইঁদুরের উপদ্রপ বেড় যাওয়ায় হতাশায় ফেলে দিচ্ছে কৃষকদের। ইঁদুর গাছের গোরা কেটে ফলসহ গাছ নিয়ে যায়। এদের ট্রাপ করে ধরা কঠিন কাজ।
প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের মধ্যে আক্ষেপ রয়েছে দলীয় পর্যায়ের এক শ্রেণির লোক- যারা চাষাবাদ না করেই ভূয়া কৃষকের পরিচয় দিয়ে প্রণোদনার সার বীজ হাতিয়ে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে। অথচ যারা প্রকৃত চাষাবাদ করে তারা প্রণোদনার সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের গরমগল এলাকার কৃষক সৈয়দ আবুল বাসার ১ একর জমিতে সরিষার চাষ করেছে। এবং তার ভাই সৈয়দ দেলোয়ারও ২ একর জমিতে চাষ করেছে সরিষা। তারা জানিয়েছে এ বছর ভাল ফলন হয়েছে আরও পরিচর্যা করা হলে বেশি ফলন পাওয়া যেত। একই গ্রামের পৃথক পৃথক প্লটে সরোয়ার হোসেন, সৈয়দ রিপন ও রিফাত হোসেনসহ শতশত কৃষক চাষ করেছে দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদার একটি অংশ পূরণকারী সরিষা।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে ১৫১.৩৮ কোটি টাকার সরিষার ফলনের প্রত্যাশা চাষিদের