শাবি, ২১ আগস্ট (ইউএনবি)- দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে (শাবিপ্রবি) বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে চান উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ। তবে এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের সবার আগে বিশ্বমানের হয়ে গড়ে উঠতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
শাবিপ্রবিতে উপাচার্য হিসেবে যোগদানের দুইবছর পূর্তি উপলক্ষে বার্তাসংস্থা ইউএনবিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের এ স্বপ্নের কথা জানান অধ্যাপক ফরিদ।
উপাচার্য বলেন, শাবিতে উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর তিনি প্রথমে শিক্ষা এবং গবেষণায় গুরুত্ব দিয়েছেন। ফলে গবেষণা খাতে বিশবিদ্যালয়ের অবস্থান শক্ত রয়েছে। এখানে গবেষণা খাতে শিক্ষকরা ২ থেকে ৮ লাখ টাকা পেয়ে থাকে।
গতবছর দেশের সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শাবিপ্রবিতে সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয় হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা তৈরি করে শিক্ষা এবং গবেষণা খাতে আরও বেশি ত্বরান্বিত করাই এখন লক্ষ্য।
শিক্ষা ও গবেষণা খাতের আর্থিক দৈন্য আর নেই জানিয়ে উপাচার্য বলেন, এখন শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে নয়, বরং আমরা জোর দিয়েছি গুণগত মানের ওপর। শিক্ষা এবং গবেষণায় দক্ষ মানবসম্পদ হয়ে দেশে-বিদেশে সুনাম অর্জনে এ প্রতিষ্ঠানের ছেলে-মেয়েরা যেন এগিয়ে থাকে, সেদিকেই বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর সেশনজটের সমস্যায় কষ্ট পেয়েছিলেন উল্লেখ করে অধ্যাপক ফরিদ বলেন, ছেলেমেয়েরা অনেক দূর-দূরান্ত থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে আসে যাদের অধিকাংশের বাবা-মা মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত। এখানকার ‘ড্রপকালচারের’ কারণে কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে চার বছরের অনার্স শেষ করতে সময় লাগতো ৭ থেকে ৮ বছর।
গত দুবছরে শিক্ষকসহ সকলের সহযোগিতায় সেশনজট প্রায় দূর করতে পেরেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বিভাগগুলোতে সময়মতো ক্লাস-পরীক্ষা এবং ফলাফল প্রকাশে গতি ফিরেছে পুরোদমে।
গত দুবছরের মধ্যে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়নি দাবি করে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে শান্তি বিরাজ করছে। যারা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি করতো তাদের বিরুদ্ধে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়াও মাদকাসক্ত, জঙ্গিবাদ, যৌন-নিপীড়ন, র্যাগিংসহ সকল অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া হয়েছে। সেই সাথে শিক্ষক-কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী, কর্মচারীদের জন্য আলাদা আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রসঙ্গে শাবি উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জন্মের পর থেকে যে অবকাঠামো ঘাটতি ছিল, তা আর থাকবেনা। আমাদের যে উন্নয়নমূলক প্রকল্প আছে তা বাস্তবায়িত হলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে কিছু লাগবেনা। নতুন নতুন একাডেমিক ভবনসহ বেশকিছু স্থাপনা নির্মাণাধীন রয়েছে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি হলে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী রয়েছে জানিয়ে ফরিদ উদ্দিন বলেন, আরও কয়েকটি হল তৈরির মাধ্যমে সেখানে ১০০ শতাংশ শিক্ষার্থী থাকার ব্যবস্থা করা হবে।
‘দেশের বাইরে থেকে শিক্ষার্থীরা যাতে এখানে পড়তে এসে কোনো আবাসন সংকটে না পড়ে, তাদের জন্য আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হবে। শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের জন্য আলাদা ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ করা হবে’, যোগ করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যেখানে সমস্যা পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই হাত দেয়া হচ্ছে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ইতিমধ্যে দীর্ঘ ১৩ বছরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। এই নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে কথা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশে ধীর গতি ছিল, সেখানেও গতি আনা হয়েছে। বিগত দুবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল জরাজীর্ণ সমস্যাকে সামনে এনে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেকসময় শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। ভালো ছাত্রকে ফেলে খারাপ ছাত্রকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে কোন আপোষ করা হয় না দাবি করে শাবি উপাচার্য বলেন, ‘একজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০-৪৩ বছর শিক্ষকতা করবেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের গুণগতমান নির্ভর করে ভালো শিক্ষকের ওপর। তাই এ বিষয়ে কোনো আপোষ চলবে না।’
শাবিপ্রবিকে সিলেটের গর্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিলেটের একটা গর্বের জায়গা হচ্ছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। সেই বৃটিশ আমল থেকে এ অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার আন্দোলন হচ্ছিল।
১৯৯১ সালে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক বেড়েছে ওইভাবে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক দিকে প্রসারিত হয়নি। বিগত দুবছরে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছি আশা রাখি সামনের দিনগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়টি আরও বেশি সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবে।’
যোগদানের দুবছর পূর্তিতে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। শিক্ষার্থীদের উচিৎ সকল সুযোগ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য এক হয়ে কাজ করা।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
উপাচার্যের দায়িত্বগ্রহণের আগে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ একাধারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্বসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।