মায়ের সহযোগিতায় হুইল চেয়ারে করে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আসা করত। বর্তমানে চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং ভবিষ্যতে সাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখে হাত পা বিহীন প্রতিবন্ধী সালাউদ্দিন। পরিবারে অভাব থাকা সত্বেও পড়ালেখা বাদ দেয়নি সে।
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা দরগাহ ঘোনা এক হত-দরিদ্র মো. জয়নাল আবেদীন ও আয়েশা বেগমে দম্পতি পরিবারে হাত পা বিহীন জন্ম নেয়া প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন চার বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে সে পঞ্চম।
তার মা আয়েশা বেগম জানান, হাত পা বিহীন জন্ম হয় সালাহউদ্দিনের। অংশবিশেষ একটি পায়ে দুইটি আঙ্গুল রয়েছে। এই দুইটি আঙ্গুল দিয়ে সে খাতায় লিখতে পারে। তার অনেক স্বপ্ন। সে কিছুতেই হারতে চায় না। তাই তার স্বপ্ন পূরণে দিনরাত কষ্ট করে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলীর
একটা হুইল চেয়ারে করে তার মা তাকে প্রতিদিন সকালে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসতেন। এরপর স্কুল ছুটি হলে দুপুরে আবার গিয়ে প্রতিবন্ধী ছেলে সালাহ উদ্দিনকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে আসতেন। এভাবে মা ছেলের স্কুলের দশ বছরের সংগ্রামের পথ চলা শেষ করে। শুরু হয় প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিনের এসএসসি পরীক্ষার যুদ্ধ। মহেশখালী (৫) ইউনুছখালী নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন বলে, ‘আমি পরিবারের বোঝা হতে চাই না । আমিও স্বপ্ন দেখি একদিন পরিবারের হাল ধরব। প্রতিবন্ধী হয়ে আমি পরিবারের বোঝা হতে চাই না। সেই স্বপ্ন নিয়ে আমি পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি।’ ব্যাংকে চাকরি করার স্বপ্ন রয়েছে তার , এমনটি জানান প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন ।
পড়ালেখা চালিয়ে নেয়ার বিষয়ে প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘স্কুলের শিক্ষকরা আমাকে সবসময় সহযোগীতা দিয়ে আসছেন। এতটুকু আসার পেছনে আমার মা ও স্কুল শিক্ষকের ভূমিকা অতুলনীয়। কম বেশি অনেকে সহযোগিতা করেছেন। তবুও পরিবারের দারিদ্রতা নিয়ে বুকে জমে আছে বিশাল কষ্টের পাহাড়।
আরও পড়ুন: বাস্তবে জীবিত হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে তারা মৃত!
মহেশখালী (৫) ইউনুছখালী নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৫ নভেম্বর এসএসসি পরীক্ষা দিতে এসে ক্যামেরা বন্দি হন সে। পুরনো হুইল চেয়ারে করে পরীক্ষা দিতে আসেন। আগের তুলনায় শরীরের ওজন বেড়ে গেছে প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিনের। তাই লক্কর ঝক্কর হুইল চেয়ারে চলাচল করতেও ভয় হয় তার। কিন্তু নিরুপায়, নতুন আরেকটা হুইল চেয়ার কেনার সামর্থ্যও নাই দরিদ্র পরিবারের। বর্তমানে যে হুইল চেয়ারটা ব্যবহার করছেন এটাও কয়েক বছর আগে ঢাকার এক ব্যাক্তি দিয়েছিল বলে জানান তিনি।
এরপর গত বছর কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে একটা হুইল উপহার দিলেও সেটা কিছু দিন পর নষ্ট হয়ে যায় । তাই আগের হুইল চেয়ারই তার ভরসা। সরকার কর্তৃক প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা ও কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিভিন্ন সময় চাউল দিয়ে সহযোগিতা করে বলে জানিয়েছে সে।
আরও পড়ুন: তিন দশক গান গেয়েই চলছে অন্ধ বাউলের সংসার
এদিকে, সব কিছুর মূল্যের দাম আকাশ ছোঁয়া, এ কারণে ভবিষ্যৎ নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন বলে জানায় প্রতিবন্ধী সালাউদ্দিন।