সকালে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয় এসব কর্মসূচির। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে আনন্দ শোভাযাত্রা ও কেক কাটার মতো কর্মসূচিও পালন করা হয়।
১৯৯১ সালে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে ইংরেজিতে ১৩ ফেরুয়ারি এবং বাংলায় ১ ফাল্গুন বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হতো। কিন্তু এই বছর বাংলা বর্ষপঞ্জির নতুন নিয়মের কারণে ১ ফাল্গুন ১৩ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হচ্ছে।
সিলেট শহরের ৫ কিলোমিটার দূরে আখালিয়ায় ৩২০ একর ভূমিতে ১৯৯১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি (১ ফাল্গুন) মাত্র ৩টি বিভাগ, ১৩ জন শিক্ষক ও ২০৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল দেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭টি অনুষদের অধীনে ২৮টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। যেখানে ১০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ১১টি কলেজ রয়েছে।
শাবি দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম ও পুরো ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কসহ আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে। বিভিন্ন সময় শাবি দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং গবেষণা ক্ষেত্রে অর্জন করেছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার।
স্বল্প এই সময়ে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অর্জনের পাল্লাটা একটু বেশিই রয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির।
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা, এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি চালু, দেশের প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা তৈরি করা, পুরো ক্যাম্পাস সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা, নিজস্ব ডোমেইনে ই-মেইল চালু, দেশীয় প্রযুক্তির ট্র্যাকিং ডিভাইস তৈরি, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বাংলা ভাষার প্রথম সফটওয়্যার 'মঙ্গল দ্বীপ' উদ্ভাবন, প্রথমবারের মতো দেশে চালকবিহীন বিমান ড্রোন আবিষ্কার, যানবাহন ট্র্যাকিং ডিভাইস উদ্ভাবন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্পন্ন একুশে বাংলা কিবোর্ড, প্রথম কথা বলা রোবট (রিবো), হাঁটতে চলতে সক্ষম রোবট ‘লি’ তৈরি, অনলাইনে টান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের সুবিধা চালু, ক্যান্সার নির্ণয়ের নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
এছাড়াও ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং-ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতো বিভাগগুলো দেশে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সেকেন্ড মেজর কোর্স নেবার সুবিধাসহ অনেক কিছু দাবি করার মতো অর্জন রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটির।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা নাসা আয়োজিত স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে ৭৯টি দেশের বাছাইকৃত ২ হাজার ৭২৯টি দলের সাথে লড়াই করে শীর্ষ চারে জায়গা করে নেয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘টিম অলিক’।
সর্বশেষ দেশের প্রযুক্তি খাতে অবদানের জন্য ঢাবি-বুয়েটকে পেছনে ফেলে দেশসেরা ডিজিটাল ক্যাম্পাস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
পাশাপাশি বিজ্ঞান গবেষণায় কৃতিত্ব অর্জন স্বরূপ স্পেনের সিমাগো রিসার্চ গ্রুপ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্কপাস থেকে প্রকাশিত দেশের ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শীর্ষস্থান অর্জন, গবেষণার মাধ্যমে ক্যান্সার শনাক্তকরণ পদ্ধতি আবিষ্কার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইআইসিটি) খাতে বিশেষ অবদানের প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড পুরস্কার-২০১৭’ অর্জনসহ দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক ক্ষেত্রেই বিশেষ অবদান রাখছে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সকলকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের ও ১ ফাল্গুনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘শাবি বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বমানের উন্নতি করতে সকলের সহোযাগিতা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’