গাজা উপকূলের ১৬ কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে তাঁবু টাঙিয়েছেন ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা। সৈকত ও এর আশপাশের ফাঁকা জায়গা, মাঠ এবং শহরের রাস্তাগুলো তাঁবুতে ছেয়ে গেছে। নালা খুঁড়ে তারা অস্থায়ী শৌচাগার নির্মাণ করেছে। পুরুষেরা খাবার ও পানির সন্ধান করছে। শিশুরা আবর্জনা ও ভবনের ধ্বংসস্তুপের মধ্যে মায়ের জন্য রান্নার কাঠ জোগাড়ে ব্যস্ত।
তিন সপ্তাহ আগে রাফায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি দক্ষিণ গাজার এই শহর ছেড়ে পালিয়ে অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। গত ৮ মাসে তাদের বেশিরভাগই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
উপত্যকার সশস্ত্র শাসক গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূল করতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এই অঞ্চলটি কার্যত ধ্বংস হয়েছে। জাতিসংঘের ভাষায় সেখানে ‘দুর্ভিক্ষ’ চলছে।
ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘ ও অন্যান্য সহযোগিতা গোষ্ঠীর কাছে পাঠানো ত্রাণ সামগ্রীর পরিমাণ নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এমতাবস্থায় পরিবারকে পুনর্বাসিত করা ও খাদ্যের সন্ধানে মূলত নিজেরাই ছুটছে ফিলিস্তিনিরা।
আরও পড়ুন: রাফাহতে প্রাণের ঝুঁকিতে রয়েছে হাজারো মানুষ: জাতিসংঘ
স্ত্রী ও ছয় সন্তান নিয়ে তাঁবুতে থাকা মোহাম্মদ আবু রাদওয়ান নামের এক স্কুল শিক্ষক বলেন, ‘পরিস্থিতি ভয়াবহ। এক তাঁবুতে অন্তত ২০ জন লোক বসবাস করছে। সেখানে বিশুদ্ধ পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই; আমাদের কিছুই নেই।
‘বারবার বাস্তুচ্যুত হওয়া, প্রিয়জনকে হারানো- এসবের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকতে কেমন লাগে, তা আমি বোঝাতে পারব না। এগুলো মানসিকভাবে বিপর্যয়কর।’
গত ৬ মে রাফায় হামলা শুরুর পরপরই আবু রাদওয়ান সেখান থেকে পালিয়ে আসেন। সেখানে তিনি যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তার কাছাকাছি ইসরায়েলি বাহিনী বোমা বর্ষণ করছিল। সেসময় তিনিসহ ৪টি পরিবার মিলে ১ হাজার ডলার দিয়ে একটি গাধার গাড়ি ভাড়া করেন। তারপর জিনিসপত্র নিয়ে সেখান থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে খান ইউনিসের উপকণ্ঠে তাঁবু ফেলেন তারা। তাঁবু তৈরির আগে একরাত খোলা আকাশের নিচেও থাকতে হয় তাদের। তাঁবুর পাশে খুঁড়ে তারা শৌচাগার নির্মাণ করেছেন এবং এর চারপাশে পুরনো কম্বল ও কাপড় দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন।