গাজায় ৭ মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরায়েল ও হামাসের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের আবেদন জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খান।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োভ গালান্ট এবং হামাসের ৩ শীর্ষ নেতা- ইয়াহিয়া সিনওয়ার, মোহাম্মদ দাইফ ও ইসমাইল হানিয়া রয়েছেন করিম খানের তালিকায়।
খানের এই পদক্ষেপকে ‘লজ্জাজনক ও ইহুদিবিরোধী’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন ইসরায়েলি নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও কৌঁসুলির এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ‘হামাসের আক্রমণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার’কে সমর্থন দিয়েছেন।
এ বিষয়ে গেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও মামলা চলার অনুমতি দেওয়া হবে কি না, তা ৩ জন বিচারকের একটি বেঞ্চ নির্ধারণ করবে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে বিচারকদের সাধারণত ২ মাস সময় লাগে।
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানি প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আশঙ্কা
ইসরায়েল এই আদালতের সদস্য নয়। ফলে পরোয়ানা জারি হলেও নেতানিয়াহু ও গালান্টের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার তাৎক্ষণিক ঝুঁকি নেই। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত তাদের বিদেশ ভ্রমণ কঠিন করে তুলতে পারে।
এ অভিযোগকে ‘অসম্মানজনক’ এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও গোটা ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন নেতানিয়াহু। সেইসঙ্গে হামাসের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
নেতানিয়াহু ও গালান্টকে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা একান্তই ‘আক্রোশজনক’ বলে অভিহিত করেছেন বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘এই প্রসিকিউটর (কৌঁসুলি) যা-ই বোঝানোর চেষ্টা করুন না কেন, হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের তুলনা হতে পারে না।’
অন্যদিকে, হামাসের পক্ষ থেকেও আইসিসির ওই প্রসিকিউটরের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানানো হয়েছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামাস নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি ‘ভুক্তভোগীকেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া’র মতো।
গাজায় আগ্রাসন থামাতে সম্প্রতি প্রবল চাপের মুখে পড়েছেন নেতানিয়াহু। নিজ দেশেরই হাজার হাজার ইসরায়েলি এ নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ করেছে। হামাসের কাছে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে একটি চুক্তি করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এমনকি যুদ্ধ বন্ধ না করলে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন খোদ গালান্ট ও ইসরায়েলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভার আরেক সদস্য বেনি গান্টস।
অপরদিকে, পশ্চিমা বিশ্বে হামাস আগে থেকেই একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত। সিনওয়ার ও দাইফ দুজনই গাজায় লুকিয়ে আছেন বলে ধারণা করা হয়। তবে গোষ্ঠীটির সর্বোচ্চ নেতা ইসমাইল হানিয়া কাতারে অবস্থান করে প্রায়ই উপত্যকায় আসেন।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলকে বোমা সরবরাহ বন্ধ করল যুক্তরাষ্ট্র
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে হামাস সদস্যরা ইসরায়েলে প্রবেশ করে হামলা চালায়। হামলায় প্রায় ১২০০ বেসামরিক ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হন। হামলার পর ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস।
ওই ঘটনার পর থেকে হামাসের ওপর আক্রোশ ঝাড়ছে ইসরায়েল। হামাসকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করতে গাজায় নৃশংস অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে যাদের অন্তত অর্ধেকই নারী ও শিশু।
যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও আগ্রাসনে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত (আইসিসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে এই আদালত প্রতিষ্ঠা হলেও এটি স্বাধীনভাবে কাজ করে।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সম্মতিতে এই আদালতের প্রতিষ্ঠা হলেও যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, রাশিয়া ও চীনের মতো বেশ কয়েকটি দেশ এই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করে না।
আদালতের আনুগত্য স্বীকার করার মাধ্যমে ২০১৫ সালে আইসিসির সদস্য হয় ফিলিস্তিন।
আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র বাহিনীকে বিচার করতে চেয়ে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় পড়ে আইসিসির কর্মকর্তারা। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রসাশনের দেওয়া ওই নিষেধাজ্ঞা অবশ্য ২০২১ সালে তুলে নেন জো বাইডেন।
গত বছর ইউক্রেন থেকে শিশুদের অপহরণের দায়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। জবাবে করিম খান ও আইসিসির বিচারকদের বিরুদ্ধে পাল্টা পরোয়ানা জারি করে ক্রেমলিন।
আরও পড়ুন: গাজায় মৃত মায়ের গর্ভ থেকে উদ্ধারের ৫ দিন পর মারা গেছে শিশুটি