ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ) শুক্রবার জাপানি ফার্মাসিউটিক্যাল তাকেদা’র তৈরি ডেঙ্গু টিকার অনুমোদনের সুপারিশ করেছে। যা ভয়াবহ এ রোগের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী কয়েক লাখ মানুষের জন্য লড়াইয়ে নতুন কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে।
শুক্রবার ইইউ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইএমএ এক বিবৃতিতে বলেছে, চার ধরনের ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে চার বছর বা তার বেশি বয়সের যে কেউ এই টিকা নিতে পারে। বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ৩৯০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ভাইরাল এই রোগে আক্রান্ত হয়। এরমধ্যে কমপক্ষে ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়, যার বেশিরভাগই শিশু।
ইএমএ জানায়, ‘বর্তমান টিকার সুবিধা ও নিরাপত্তা ১৯টি ক্লিনিকাল ট্রায়ালে মূল্যায়ন করা হয়েছে, যা ১৫ মাস থেকে ৬০ বছর বয়সী ২৭ হাজারেরও বেশি লোককে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।’
গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে বিরত রাখতে তাকেদা’র টিকা প্রায় ৮৪ শতাংশ কার্যকরী এবং টিকা দেয়ার চার বছর পর পর্যন্ত সংক্রমণ রোধে প্রায় ৬১ শতাংশ কার্যকর থাকে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু: ৩১০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি
ল্যাটিন আমেরিকার ১২০টি এবং এশিয়ার অনেক দেশে গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ ডেঙ্গু। এ রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। যদিও প্রায় ৮০ শতাংশ রোগীর সংক্রমণ মৃদু। অধিকাংশ রোগীর জানানো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা ও পেশী ব্যথা।
মশার মাধ্যমে ছড়ানো এ রোগ গুরুতর হলে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত, অঙ্গহানি এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
২০১৭ সালে সানোফি পাস্তুরের ডেঙ্গু ভ্যাকসিন ‘ডেঙ্গুভ্যাক্সিয়া’ ফিলিপাইনে জনস্বাস্থ্য সঙ্কট শুরু করার পরে তাকেদা ভ্যাকসিনের সুপারিশ করা হয়। ডেঙ্গুভ্যাক্সিয়া টিকা এমন লোকেদের দেহে গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যারা আগে ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হয়নি। এমনকি এর ফলে ১০০টিরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়।
সমালোচকরা অভিযোগ করেছেন, সানোফি ভ্যাকসিনটি ফিলিপাইনজুড়ে প্রায় আট লাখ অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুর ওপর প্রয়োগ করা হয়েছিল। অনেক বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাকে ‘অযথা তাড়াহুড়ো করে’ ভ্যাকসিনটি সুপারিশ করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
প্রসিকিউটররা বলেছিলেন যে এর ফলেই এই মৃত্যু ঘটে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগে একবার সানোফি পাস্তুর ভ্যাকসিনটি নিরাপদ বলে উপসংহারে পৌঁছেছিল। কিন্তু পরে বলেছে যে পরীক্ষা করে শুধুমাত্র আগে যে শিশুদের ডেঙ্গু হয়েছিল, শুধুমাত্র সেসব শিশুকেই এই টিকা দেয়া উচিত।
ইএমএ বলেছে, তাকেদা ভ্যাকসিনের অনুমোদনের অর্থ হল ‘বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের ওপর সৃষ্ট হুমকি মোকাবিলার করা’।
সংস্থাটি আরও জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলোর আস্থা থাকা উচিত যে ভ্যাকসিনটি নিরাপদ ও কার্যকর।
ম্যালেরিয়ার পরে, উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে ফিরে আসা ইউরোপীয় ভ্রমণকারীদের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বর আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি।
ইন্দোনেশিয়া তাকেদা ভ্যাকসিনের লাইসেন্স দেয়া প্রথম দেশ। সেপ্টেম্বর মাসে দেশটি তাকেদা ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়।