পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উদযাপন সমাবেশে বোমা হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪ জনে পৌঁছেছে। শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দেশটির কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, শুক্রবার দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানের মাস্তুং জেলায় ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মদের (সা.) জন্মদিন উপলক্ষে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উদযাপন সমাবেশে একজন সন্দেহভাজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী বিস্ফোরণ ঘটায়।
কয়েক মাসের মধ্যে পাকিস্তানে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে করা সবচেয়ে মারাত্মক হামলা ছিল এটি।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘এ হামলায় প্রায় ৭০ জন আহত হয়েছে। যাদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর।’
এখনও পর্যন্ত কেউ এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
তবে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর আঞ্চলিক সহযোগীদের দিকে মূলত সন্দেহের তীর রয়েছে। কারণ তারা পাকিস্তানের চারপাশে এর আগেও কয়েকটি মারাত্মক বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে।
বেলুচিস্তানে তাদের এক কমান্ডার নিহত হওয়ার পর আইএস কয়েকদিন আগেও একই এলাকায় একটি হামলা চালায়।
এছাড়াও, শুক্রবার উত্তর-পশ্চিম খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের একটি জেলা হাঙ্গুতে একটি থানার চত্বরে অবস্থিত একটি মসজিদে বিস্ফোরণে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত এবং সাতজন আহত হয়।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উদযাপনের সমাবেশে বিস্ফোরণে নিহত ২১
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী পুলিশ স্টেশনের মসজিদের কাছে আসে। রক্ষীরা একজনকে গুলি করে হত্যা করলেও অন্যজন মসজিদে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটায়।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভিতরে প্রায় ৪০ জন মুসল্লীকে নিয়ে ইটের তৈরি ভবনটি বিস্ফোরণে ধসে পড়ে।
ওই এলাকার পুলিশ প্রধান জাভেদ লেহরি জানিয়েছেন, মাস্তুংয়ে শুক্রবারের বোমা হামলার ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
একটি মসজিদের পাশের খোলা জায়গায় এই হামলা ঘটেছে, যেখানে প্রায় ৫০০ মানুষ জুমার নামাজের পরে নবীর (সা.) জন্মদিন উদযাপনের জন্য একটি মিছিলের জন্য জড়ো হয়েছিল, যা মিলাদুন্নবী নামে পরিচিত।
লেহরি বলেছেন, বেশিরভাগ লাশ স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে এবং অন্যদের দেহাবশেষ নিজ শহরে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, সন্দেহভাজন অপরাধী বা অপরাধীদের ছিল কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বোমা বিস্ফোরণের স্থান থেকে উদ্ধার করা দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে।
বেলুচিস্তান প্রদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মীর আলি মারদান ডোমকি সাংবাদিকদের বলেছেন, এখন পর্যন্ত তদন্তের সমস্ত ফলাফলে মনে হচ্ছে এটি একটি আত্মঘাতী বোমা হামলা।
তিনি বলেন, কাউন্টার-টেররিজম তদন্তকারীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য কাজ করছে। শিগগিরই পুরো জাতিকে তদন্তের ফলাফল জানানো হবে।
ডোমকি বলেন, ‘আমরা এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব এবং তাদের আর নিরপরাধ জীবন নিয়ে খেলতে দেবো না।’
তিনি বলেন, ‘সরকার গুরুতর আহত রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য করাচিতে স্থানান্তর করতে চায়। প্রত্যেক আহত ও নিহত ব্যক্তির পরিবার আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবে।’
মাস্তুংয়ের মানুষ নিহতদের উদ্দেশে শোক জানাতে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। পাকিস্তানের অন্যান্য স্থানেও হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা হামলা, ৯ সেনা নিহত
একটি ধর্মীয় সংস্থা মজলিস-ই-উলামা নিজামিয়ার সদস্যরা বোমা হামলার নিন্দা জানাতে লাহোর শহরে একটি প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হয়েছিল।
জনতার উদ্দেশে মাওলানা আবদুস সাত্তার সাইদী মাস্তুং ও হাঙ্গুরের নৃশংস হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
রাষ্ট্রপতি আরিফ আলভি, প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার-উল-হক কাকার, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সাবেক আইন প্রণেতা, রাজনৈতিক দলের প্রধান, সামাজিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠী ও সুশীল সমাজের সদস্যরাও বোমা হামলা এবং মানুষের জীবনের ক্ষয়ক্ষতির নিন্দা জানিয়েছেন।
একটি বিবৃতিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাও ‘পাকিস্তানে জঘন্য ও কাপুরুষোচিত আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলার’ নিন্দা করেছেন।
তারা ‘এই নিন্দনীয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অপরাধীদের, সংগঠক, অর্থদাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং তাদের বিচারের আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।’
রাষ্ট্রীয় টিভির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন যে এই ধরনের হামলা প্রকাশ করে যে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা ছাড়া সন্ত্রাসীদের আর কোনো লক্ষ্য নেই।
ইসলামাবাদে মার্কিন দূতাবাস এক্স (টুইটার)-এ একটি বিবৃতি পোস্ট করেছে।
যেখানে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের জনগণ সন্ত্রাসী হামলার ভয় ছাড়াই তাদের বিশ্বাসকে উদযাপন করার যোগ্য।’
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে গির্জা ও খ্রিস্টানদের বাড়িতে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১২৯