ভারতের সরকারচালিত প্রাণী কল্যাণ বিভাগ দেশটির নাগরিকদের এই বছর ভ্যালেন্টাইনস ডে’কে রোম্যান্স দিবস হিসেবে উদযাপনের পরিবর্তে ‘গরু আলিঙ্গন দিবস’ হিসেবে উদযাপনের আহ্বান করেছে।
বুধবার ভারতের পশু কল্যাণ বোর্ড বলেছে, ‘গরুকে আলিঙ্গন করা মানুষের মানসিকতাকে সমৃদ্ধ করবে এবং ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক সুখ বৃদ্ধি করবে।’
গরুকে পবিত্র বলে পূজাকারী হিন্দুদের মতে, পশ্চিমা এই দিবসটি ভারতের ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধের বিপরীত।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হিন্দু কট্টরপন্থীরা ভারতের বিভিন্ন শহরের দোকানে অভিযান চালিয়ে কার্ড ও উপহার পুড়িয়ে দিয়েছে এবং রেস্তোরাঁ ও পার্ক থেকে হাত ধরা বিভিন্ন জুটিকে তাড়িয়ে দেয়। তাদের দাবি ভ্যালেন্টাইনস ডে অশ্লীলতার প্রচার করে।
শিবসেনা ও বজরং দলের মতো কট্টরপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো জানায়, এই ধরনের কর্মকাণ্ড (‘গরু আলিঙ্গন দিবস’) হিন্দু পরিচয় পুনরুদ্ধারের পথ প্রশস্ত করবে।
আরও পড়ুন: হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে ভারতের ওপর আক্রমণের অভিযোগ আদানির
তবে, দেশের তরুণ শিক্ষিত মানুষেরা ধর্ম নির্বিশেষে সাধারণত ছুটির এই দিনটিতে পার্ক ও রেস্তোরাঁয় বেড়াতে বা খেতে যায়, উপহার বিনিময় করে এবং অন্যান্য ভারতীয় উৎসবের মতোই আনন্দ করার জন্য পার্টি আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকার, বহুমাত্রিক বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে হিন্দু আধিপত্যবাদী দেশে পরিণত করার এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
দেশটির প্রায় এক দশমিক ৪ বিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই হিন্দু। মুসলমান ১৪ শতাংশ এবং বাকি ৬ শতাংশ খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ ও জৈন।
গরু দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু মানসিকতায় গভীরভাবে মিশে আছে এবং অনেকেই এটিকে নিজেদের মায়ের মতোই গভীরভাবে শ্রদ্ধা করে। ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যই গরু জবাই নিষিদ্ধ করেছে।
পশু কল্যাণ বোর্ডের আবেদন হলো, ১৪ ফেব্রুয়ারি মানুষকে বাইরে যেতে এবং গরুকে আলিঙ্গন করতে বলা।
নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় নামক একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, এটা ‘একদম পাগলামি। এতে কোনও যুক্তি নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল এটি এখন সরকারি অনুমোদন পেয়েছে। এটি রাষ্ট্র ও ধর্মের মধ্যে আরও একটি রেখা মুছে দিল। এখন রাষ্ট্র তাই করছে, যা করার জন্য রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দলগুলো প্রচারণা চালাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: বয়সকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মুম্বাই ম্যারাথনে শাড়ি পরে দৌড়ালেন ৮০ বছরের ভারতী