জান্তা সরকার চারজন রাজনৈতিক বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় মঙ্গলবার মিয়ানমারে তীব্র প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারও এর নিন্দা জানাচ্ছে। সেইসঙ্গে আশংকা করা হচ্ছে, সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিকে যে সহিংসতা ও অস্থিরতা ঘিরে রেখেছে তা অবসানের প্রাথমিক প্রচেষ্টা বিফলে যাবে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত নেত্রী অং সাং সুচির কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার পর থেকে মিয়ানমারের সামরিক সরকারে বিরুদ্ধে হাজার হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। কিন্ত সোমবারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বিগত এক দশকে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় ফরমানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত নোয়েলিন হেজারের সঙ্গে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফু্দ্দিন আব্দুল্লাহ কুয়ালামপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটি মানবতা বিরোধী অপরাধ।’
তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহে কম্বোডিয়ায় শুরু হতে যাওয়া অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) ভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এই মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের ওপর আলোকপাত করা হবে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে ৪ গণতন্ত্রপন্থীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
মিয়ানমার প্রভাবশালী গ্রুপ আশিয়ানের সদস্য। যে গ্রুপ গত বছর সকল পক্ষের সঙ্গে সংলাপে মিয়ানমারের ব্যাপারে পাঁচটি বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছে। এগুলো হলো- মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা করা, দ্রুত সহিংসতা বন্ধ এবং একজন বিশেষ দূতকে সকল পক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো।
এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা উল্লেখ করে সাইফু্দ্দিন আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা দেখছি, এই পাঁচটি বিষয়কে সামনে রেখে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জান্তা সরকার সেগুলোর সঙ্গে তামাশা করছে।’
হেজার বলেন, ‘জাতিসংঘ এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে একজন ব্যক্তির বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাকে ক্ষুন্ন করেছে।’
ব্যাংককে মিয়ানমারের দূতাবাসের সামনে প্রবল বর্ষণের মধ্যে শত শত গণতন্ত্রপন্থী পতাকা উড়িয়ে শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করছে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমার বিষয়ক আসিয়ানের বিশেষ দূতকে সু চির সঙ্গে দেখা করার আহ্বান
জনাকীর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে এক তরুণ একটি নীল মাইকে চিৎকার করে বলছে, জান্তা তার নৃশংস ক্ষমতা ব্যবহার করছে, বিক্ষোভকারীদের অনেকে অং সান সুচি ও মৃত্যুদণ্ড দেয়া চারজনের ছবি প্রদর্শন করছেন।’
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ফিয়ো জেয়া থো(৪১) সুচির দলের সাবেক একজন আইন প্রণেতা, কিয়ে মিন ইউ(৫৩)প্রবীণ গণতন্ত্রীপন্থী কর্মী যিনি কো জিমি নামে বেশ পরিচিত। তাদেরকে অভিযুক্ত করতে ও মৃত্যুদণ্ড দিতে সামরিক আদালত সব চেষ্টাই করেছে, এমনকি আপিলের কোনো সুযোগও রাখেনি।
মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে রায় কার্যকর করা হয়েছে, যা তাদের পরিবারের সদস্যদেরকেও বিস্মিত করেছে।
ফিয়ো জেয়া থো-এর মা কিন উইন মে সংবাদ সংস্থা এপিকে বলেন, তিনি শুক্রবার তার সন্তানের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন এবং তিনি পড়ার জন্য চশমা, বই ও খরচের জন্য কিছু টাকা দিতে বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি খুবই মর্মাহত হই যখন দণ্ড কার্যকরের খবর শুনতে পেয়েছিলাম, আমি মনে করেছিলাম আরও কিছু সময় পাবো।’
কিন উইন বলেন, তিনি আশা করছেন তার সন্তান ও অন্যদের মৃত্যুকে বীরত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের জন্য গর্বিত, তারা দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।’
এই চার রাজনৈতিক নেতার দণ্ড কার্যকর তাৎক্ষণিকভাবে সারাবিশ্বে ভবিষ্যৎ মৃত্যুদণ্ড বন্ধের দাবি ওঠে এবং রাজনৈতিকভাবে বড় পরিসরে এর নিন্দা জানানো হয়।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো প্রয়োজন: জাতিসংঘ