রাজাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় রাজনৈতিক দলের এক কর্মীর ২৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন থাইল্যান্ডের একটি আদালত। রায়ে বলা হয়েছে, তার পোস্টের মাধ্যমে দেশের রাজতন্ত্রের মানহানি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) ২৭ বছর বয়সী ওই যুবককে দণ্ড দেয় আদালত।
অন্যদিকে একই অপরাধে অভিযুক্ত দুই তরুণী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেও অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত ওই তরুণের নাম মংখোন থিরাকোট।
দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ চিয়াং রাইয়ের আদালত বলেছেন যে মংখোন থিরাকোট ২৭টি পোস্টের মধ্যে ১৪টিতে লেস-ম্যাজেস্ট আইন লঙ্ঘন করেছে। যার জন্য তাকে গত আগস্টে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আইনটি বর্তমান রাজা, তার রানী, উত্তরাধিকারী এবং যে কোন শাসককে সুরক্ষা দেয়।
লেস-ম্যাজেস্ট আইনে রাজতন্ত্রকে অপমান করার জন্য প্রতি ঘটনায় তিন থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন যে এটি প্রায়শই বিরোধী রাজনৈতিক মতকে দমন করার একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুন: দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত করতে আগ্রহী বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড
এর আগে ২০২০ সালে শুরু হওয়া ছাত্রদের নেতৃত্বে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভগুলোতে প্রকাশ্যে রাজতন্ত্রের সমালোচনা করেছিল। যা আগে একটি নিষিদ্ধ বিষয় ছিল। যেটি এই আইনে কঠোর বিচারের দিকে পরিচালিত করে। তবে আগে তুলনামূলকভাবে খুব কমই এই আইন প্রয়োগ করা হয়েছিল।
২০২০ সালের নভেম্বর থেকে একটি আইনি সহায়তা সংস্থা থাই লইয়ার্স ফর হিউম্যান রাইটস’র মতে, ১৮ জন নাবালকসহ কমপক্ষে ২২৮ জনের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এমনকি কোভিড-১৯ মহামারি এবং গ্রেপ্তারের কারণে প্রতিবাদ বিক্ষোভ আন্দোলন তুলে নেয়া হলেও রেহাই দেয়া হয়নি।
চিয়াং রাই আদালত বলছে যে মংখোন একজন অনলাইন পোশাক ব্যবসায়ী। তার পোস্ট করা ১৩টি বার্তা আইন লঙ্ঘন করেনি। কারণ এগুলোতে বর্তমান রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের পিতা প্রয়াত রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের সঙ্গে সম্পর্কিত, বা কোনও নির্দিষ্ট রাজকীয় ব্যক্তিত্বের উল্লেখ করেনি। তবুও মংখোনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। অন্য ১৪টি পোস্টের প্রত্যেকটির জন্য তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আদালতকে মংখোন সহযোগিতা করার কারণে মোট ৪২ বছরের কারাদণ্ড এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে ২৮ বছর করা হয়।
মংখোনের মামলা যখন আপিল শুনানিতে ছিল, তখন তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। সেক্ষেত্রে শর্ত ছিল যে তিনি রাজতন্ত্রের ক্ষতি করে বা দেশ ত্যাগ করে এমন কাজে জড়িত হবেন না।
একই ধরনের অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত দুই মহিলা কর্মী কারাগারে অনশনের কারণে লেস-ম্যাজেস্ট আইনের অধীনে বিচারগুলো সম্প্রতি জনসাধারণের নজরে এসেছে।
এ ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত দুইজন তানতাওয়ান ‘তাওয়ান’ টুয়াতুলানন এবং ওরাওয়ান ‘বাম’ ফুপং, জামিনে মুক্ত হয়েছিল। কিন্তু চলতি মাসের শুরুতে ঘোষণা করেছিল যে তারা একই অভিযোগে বিচারাধীন থাকা অন্যদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে কারাগারে ফিরে যেতে তাদের নিজস্ব মুক্তি প্রত্যাহার করছে।
তারা বিচার ব্যবস্থার সংস্কার, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি এবং লেস-ম্যাজেস্ট আইনের মতো আইন বাতিল করে নাগরিক স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছে।
কারাগারে তিন দিন থাকার পর তারা খাবার ও তরল কিছুই না খেয়ে অনশন শুরু করে, যা তাদের জীবনের জন্য হুমকি।
মঙ্গলবার তাদের কারা হাসপাতাল থেকে উন্নত সুবিধাসহ একটি রাষ্ট্রীয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তাদের ধর্মঘট অব্যাহত থাকায় সমর্থকরা ছোট ছোট বিক্ষোভ করে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড ও আসিয়ানের সক্রিয় ভূমিকা চায় ঢাকা
বিরোধী দল মুভ ফরওয়ার্ড পার্টি তাদেরকে সমর্থন দিয়ে আসছে। তারা লেস-ম্যাজেস্ট আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু সংসদে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
প্রস্তাবটি রাজার মানহানি করার জন্য সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড এবং তিন লাখ বাহট (৯ হাজার ১৬০ মার্কিন ডলার) পর্যন্ত জরিমানা কমিয়ে দেবে, যেখানে রানী, রাজার উত্তরাধিকারী বা রাজার বিরুদ্ধে একটি অপরাধ সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল এবং দুই লাখ বাহট (ছয় হাজার ১০০ মার্কিন ডলার) পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
দলের নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত বলেছেন, ‘পুরো থাই বিচার ব্যবস্থায় একটি সমস্যা রয়েছে এবং তাই লেস-ম্যাজেস্ট আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। যা একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। থাইল্যান্ডকে এটি সমাধান করতে হবে এবং তার বিকারগ্রস্ত বিচার ব্যবস্থাকে আরও ভাল করতে হবে।’
আরও পড়ুন: থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০ বছর: ঢাকার আঞ্চলিক সংহতির আহ্বান