রবিবার ভারতে সাপ্তাহিক ছুটি। এ দিনই ভারতবাসী ঘুম থেকে উঠলেন মারাত্মক এক দুঃসংবাদ শুনে। কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর মারা গেছেন। এরপর থেকেই পুরো ভারতবর্ষ তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছেন।
রবিবার সকাল ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৯২ বছর বয়সী সুরসম্রাজ্ঞী। মধ্য জানুয়ারি থেকেই করোনা ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
১৯৪০ এর দশক থেকে শুরু করে ৩৬টি ভারতীয় ও বিদেশি ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে ৩০ হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করা হয়েছে তাঁর। সবচেয়ে বেশি গান গাওয়া সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে তিনি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসেও স্থান করে নেন।
এ দিকে কিংবদন্তি এই শিল্পীর মৃত্যুতে ভারতে দুদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রধান বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদ রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে হেমা মালিনী, ক্রিকেট আইকন বিরাট কোহলির মতো বলিউড তারকারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছেন।
আরও পড়ুন: লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে সঙ্গীতাঙ্গনে বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হলো: প্রধানমন্ত্রী
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে এই শোকাবহ সংবাদ শেয়ার করা মানুষজনের মধ্যে অন্যতম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্রের বাইরেও তিনি ভারতের সমৃদ্ধি নিয়ে সব সময় উৎসাহী ছিলেন।’
মোদি লেখেন, ‘সদয় ও শ্রদ্ধেয় লতা দিদি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তিনি আমাদের দেশে এমন এক শূন্যতা তৈরি করে গেলেন যা অপূরণীয়। পরবর্তী প্রজন্ম তাঁকে ভারতীয় সংস্কৃতির একজন বলিষ্ঠ ধারক হিসেবে মনে রাখবে; যার সুরেলা কণ্ঠ মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখত।’
তিনি লেখেন, ‘দশকের পর দশক ধরে দি ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের বিবর্তন খুব কাছ থেকে দেখেছেন। চলচ্চিত্রের বাইরেও তিনি ভারতের সমৃদ্ধি নিয়ে সব সময় উৎসাহী ছিলেন। তিনি সব সময় একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ ভারত চাইতেন।’
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী লেখেন, ‘তার সোনালি সুর অমর হয়ে থাকবে এবং তাঁর ভক্তদের হৃদয়ে তা অনুরণিত হবে। আমি তাঁর পরিবার, বন্ধু ও ভক্তদের প্রতি সমবেদনা জানাই।’
লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে বলিউড তারকা হেমা মালিনী ‘গভীর শোকাহত’ বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বলিউডে একটা যুগের সমাপ্তি হলো।’
আরও পড়ুন: চলে গেলেন সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর
লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে ভারত ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলিও সমবেদনা জানিয়ে টুইট করেছেন। তিনি লেখেন, ‘লতাজির মৃত্যুর সংবাদ শুনে গভীর শোকাহত হয়েছি। বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ শ্রোতার হৃদয় ছুঁয়েছে তাঁর গান। সব গান ও স্মৃতির জন্য ধন্যবাদ।’
কিংবদন্তি এই শিল্পী ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ইন্দোর রাজ্যের রাজধানী ইন্দোরে (বর্তমান মধ্যপ্রদেশ) জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৮৯ সালে ভারত সরকার তাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত করেন। তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০১ সালে তাকে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ভারতরত্নে ভূষিত করা হয়। এম. এস. সুভলক্ষ্মীর পর এই পদক পাওয়া তিনিই দ্বিতীয় সঙ্গীতশিল্পী।
১৯৭৪ সালে লতা মঙ্গেশকর প্রথম ভারতীয় হিসেবে রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।