মঙ্গলবার ‘কোভিড-১৯ সৃষ্ট বৈশ্বিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনশক্তি রপ্তানি সেক্টরের উত্তরণের উপায় ও সরকার কর্তৃক প্রণোদনা’ শীর্ষক এক অনলাইন সেমিনারে এসব দাবি জানান জনশক্তি ব্যবসায়ীরা।
সেমিনারে বায়রা সভাপতি বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে জনশক্তি ব্যবসায়ীদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে গত এপ্রিল মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। আমরা এ খাতের জন্য দুই হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দাবি করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এ সংকটকাল অতিক্রমে সরকারের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। করোনাকাল অতিক্রমের পর যাতে আমরা দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে পারি সে জন্য আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বায়রার ট্রেনিং সেন্টার উদ্বোধন করা হবে বলে আশা করছি।’
বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাশার মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তারা আমাদের রক্ত চুষে গোলায় ধান ভরেছে। সিন্ডিকেটকে সব সময় ঘৃণা করি এবং ঘৃণা করে যাব। এ সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে। যদি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট না হতো, সব এজেন্সিকে ব্যবসা করতে দেয়া হতো তাহলে আমাদের আজ ভিক্ষা চাইতে হতো না, সরকারের কাছে প্রণোদনা চাইতে হতো না। আপনারা সবাই ১০ সিন্ডিকেটকে বয়কট করুন।’
রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক টিপু সুলতান বলেন, ‘করোনার কারণে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সব বন্ধ। গত তিন-চার মাস হলো অফিস ভাড়া দিতে পারি না। অথচ এ খাতে আমরা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি।’
তিনি সরকারের কাছে বায়রার চাওয়া দুই হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দ্রুতই সদস্যদের জন্য বরাদ্দের দাবি জানান।
ডিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মোক্তার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘করোনাকালে আমাদের প্রবাসীরাও ক্ষতির মধ্যে রয়েছেন। কয়েক লাখ প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। অনেকে আটকা পড়েছেন। তারা ফিরে যেতে না পারায় হতাশায় ভুগছেন। কোন দেশ থেকে কতজন প্রবাসী দেশে ফিরেছেন এবং কতজন আটকা পড়েছেন তাদের অ্যাপের মাধ্যমে ডাটাবেজ তৈরি করা উচিত। এ জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বায়রা উদ্যোগ নিতে পারে।’
বায়রার সাবেক মহাসচিব রিয়াজ উল ইসলাম বলেন, ‘করোনার করুনায় আমরা জনশক্তি ব্যবসায়ীরা আটকে গেছি। এ সংকট থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সে জন্য সরকারকে প্রণোদনা দিতে হবে।’
রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব আরিফুর রহমান বলেন, যেখানে মন্ত্রণালয় করোনা বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে এ সেক্টর রক্ষার জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে কীভাবে প্রণোদনা দিয়ে বাঁচানো যায়, বাজারগুলো রক্ষা করা যায়, নতুন শ্রম বাজার খোজা যায় সেই চেষ্টা করবে, তা না করে হঠাৎ ডাটাবেজ থেকে কর্মী নেয়া ও কর্মীর টাকা ব্যাংক-বিএমইটি’র মাধ্যমে লেনদেন করার বিষয়টি এ সময়ে খুবই অপ্রাসঙ্গিক।
‘ঐক্যবদ্ধভাবে এসব বন্ধ করতে হবে এবং রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে বাঁচানোর জন্য প্রণোদনা আদায় করতে হবে,’ যোগ করেন আরিফুর রহমান।
সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারম্যান এমএস শেকিল চৌধুরী বলেন, ‘জনশক্তি খাত একেবারে স্থবির হয়ে পড়েছে। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন আপনারা। হাজার হাজার লোকের ভিসা হলেও আটকে গেছে। কোন দেশের কী পরিমাণ ভিসা আটকে আছে তার ডাটাবেজ করুন, সরকারকে দেন। আশা করছি সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় ফের এ খাত ঘুরে দাঁড়াবে।’
রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক টিপু সুলতানের সঞ্চালনায় অনলাইন সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী, রিপোটার্স ফর বাংলাদেশি মাইগ্রেন্টসের (আরবিএম) সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।