দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং ক্রমাগত উদ্ভাবন ও টেকসই চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে পোশাক শিল্প গুরুত্বপূর্ণ। এই গতি বজায় রাখার জন্য, আমাদের অবশ্যই স্থায়িত্ব এবং নৈতিক অনুশীলনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’
মঙ্গলবার(৫ মার্চ) রাজধানীতে ‘ভিশন বাংলাদেশ এবং পোশাক শিল্পের টেকসই অর্জন এবং প্রতিযোগিতামূলকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভার উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
টেকসই অবস্থার দিকে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য ইইউর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি। এসময় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন সহযোগিতা পোশাক শিল্পের মধ্যে নৈতিক অনুশীলন, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অর্থবহ পরিবর্তনের জন্য সরকার, শিল্প ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মধ্যে সহযোগিতা অপরিহার্য।’
আরও পড়ুন: তৈরি পোশাক শিল্পে মূল্য সংযোজনের ওপর জোর দিতে হবে: বিজিএমইএ সভাপতি
সব কর্মীদের জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ কাজের পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিআইনেন।
তিনি বলেন ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য শোভন কর্মপরিবেশ মৌলিক অংশ। ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কাজের পরিবেশ এবং কর্মজীবনে অগ্রগতির সুযোগগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা শ্রমিকদের মঙ্গল এবং শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য নিশ্চিত করতে পারি। যেটি টেকসই ব্যবসাও নিশ্চিত করে।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট মিরান আলী বলেন, ‘টেকসই অবস্থা কেবল একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতাই নয়; এটি ব্যবসায়িক দিক দিয়েও বাধ্যতামূলক। পরিবেশবান্ধব অনুশীলন এবং নৈতিক মানগুলো গ্রহণ করার মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়াতে পারি এবং শিল্পের জন্য একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারি।’
আরও পড়ুন: বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদ্ভাবন নীতি উন্মোচন
ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশনের (এনসিসিডব্লিউই) সভাপতি মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শ্রমিকরা পোশাক শিল্পের মেরুদণ্ড। তাদের চাওয়া-পাওয়া শোনা এবং তাদের অধিকার সুরক্ষিত করা টেকসই পোশাক শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সম্পৃক্ততার সঙ্গে সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের ইতিবাচক ভূমিকা পোশাক শিল্পের মধ্যে সম্প্রীতি ও টেকসই বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে, আমরা এমন একটি ভবিষ্যৎ গঠন করতে চাই, যেখানে বাংলাদেশের টেকসই পোশাক শিল্প এবং প্রতিযোগিতা একসঙ্গে কাজ করে।’
আইএলও-আইএফসি বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বে এবং জিআইজেড এবং ওয়াটারএইডের সহযোগিতায় সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরাম (সাফ)-২০২৪-এর আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ।
অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা, শিল্প নেতা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীজনরা আরও নৈতিক ও পরিবেশবান্ধব পোশাক শিল্পের ওপর জোর দেন।
আরও পড়ুন: তৈরি পোশাকের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে এনবিআরকে অনুরোধ জানিয়েছে বিজিএমইএ
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে এই খাতে ৪০ লাখেরও বেশি লোক কাজ করেন। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী পোশাক সরবরাহ শৃঙ্খলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাফ ২০২৪ এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেখানে এই খাতের সব কর্মকর্তারা এক হয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোতে আলোচনা করে সমাধানের পথকে তরান্বিত করতে পারেন। একই সঙ্গে এই ফোরাম পোশাক খাতের সেরা উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিতে উৎসাহিত করেছে। পোশাক খাতকে আরও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এই ফোরাম।
দিনব্যাপী ফোরামে প্রায় ৫০০ জন দেশি-বিদেশি প্রতিনিধি অংশ নেন।
আরও পড়ুন: ১৯ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে ‘খাদি উৎসব-২০২৪’