সৌদি আরব এবং অন্যান্য প্রধান তেল উৎপাদনকারীরা মে থেকে বছরের শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন মোট এক দশমিক ১৫ মিলিয়ন ব্যারেল পর্যন্ত আশ্চর্যজনক হ্রাস ঘোষণা করেছে। এই পদক্ষেপে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বাড়তে পারে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কোষাগার পূরণ করতে তেলের উচ্চমূল্য সাহায্য করবে। কারণ, তার দেশ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি আমেরিকান ও অন্যদের পাম্পে আরও বেশি অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করবে।
এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরও টেনে আনতে পারে, যেটি সৌদি আরব এবং অন্যান্য মিত্রদের উৎপাদন বাড়াতে আহ্বান জানিয়েছে। কারণ, এটির দাম কমিয়ে আনতে এবং রাশিয়ার অর্থনীতিকে চাপে ফেলার চেষ্টা করে।
ক্লিয়ারভিউ এনার্জি পার্টনারস এলএলসি-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেভিন বুক বলেছেন, শুধুমাত্র উৎপাদন কমানোর ফলেই মার্কিন পেট্রোলের দাম প্রতি গ্যালনে প্রায় ২৬ সেন্ট বাড়তে পারে।
সাধারণ বৃদ্ধির পাশাপাশি যখন রিফাইনারিগুলো গ্রীষ্মকালীন ড্রাইভিং মৌসুমে গ্যাসোলিনের মিশ্রণ পরিবর্তন করে তখন এনার্জি ডিপার্টমেন্ট প্রতি গ্যালন গড়ে ৩২ সেন্টে মৌসুমী বৃদ্ধির হিসাব করে, বলেন বুক।
তাই গড় মার্কিন মূল্যের সঙ্গে এখন প্রায় তিন দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার প্রতি গ্যালন রেগুলার। এএএ অনুসারে, এর অর্থ গ্রীষ্মকালে প্রতি গ্যালন গ্যাসোলিন ৪ ডলারের বেশি হতে পারে।
আরও পড়ুন: রমজানের আগে ওএমএসের ১ কোটি ৬০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনবে টিসিবি
তবে বুক বলেছে, তেল ও গ্যাসের দামে বেশ কিছু জটিল পরিবর্তন রয়েছে। প্রতিটি দেশের উৎপাদন হ্রাসের আকার নির্ভর করে বেসলাইন উৎপাদন সংখ্যার উপর যেটি ব্যবহার করছে, তাই হ্রাসটি এক দশমিক ১৫ মিলিয়ন নাও হতে পারে। হ্রাসগুলো কার্যকর হতে বছরের অনেক সময় লাগতে পারে৷ ব্যাংকিং সঙ্কটের কারণে মার্কিন মন্দা দেখা দিলে চাহিদা কমতে পারে। তবে গ্রীষ্মকালে এটি আরও বাড়তে পারে, কারণ এসময়টিতে আরও বেশি লোক ভ্রমণ করে।
বুক বলেন, যদিও সারা বিশ্বে প্রতিদিন ব্যবহৃত প্রায় ১০০ মিলিয়ন ব্যারেল তেলের মাত্র এক শতাংশ উৎপাদন কম হয়। তবুও দামের উপর প্রভাব বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, তেলের দাম যেভাবে কাজ করে তার জন্য এটা একটা বড় ব্যাপার। ‘আপনি এমন একটি বাজারে আছেন যা তুলনামূলকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ। আপনি একটি অল্প দূরে নিয়ে যান, চাহিদা কী তার উপর নির্ভর করে, আপনি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ মূল্য প্রতিক্রিয়া পেতে পারেন।’
সৌদি আরব ওপেক সদস্যদের মধ্যে প্রতিদিন পাঁচ লাখ ব্যারেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। হ্রাসকৃত পরিমাণগুলো গত অক্টোবরে ঘোষিত একটি হ্রাস ছাড়াও যা বাইডেন প্রশাসনকে ক্ষুব্ধ করেছিল।
সৌদি জ্বালানি মন্ত্রণালয় এই পদক্ষেপকে তেলের বাজার স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে একটি ‘সতর্কতামূলক ব্যবস্থা’ হিসাবে বর্ণনা করেছে। ২০২২ সালে সৌদি আরবের প্রতিদিন সাড়ে ১১ মিলিয়ন ব্যারেল গড় উৎপাদনের পাঁচ শতাংশেরও কম এই ঘাটতি দেখায়।
ইরাক বলেছে যে তারা প্রতিদিন দুই লাখ ১১ হাজার ব্যারেল, সংযুক্ত আরব আমিরাত এক লাখ ৪৪ হাজার, কুয়েত এক লাখ ২৮ হাজার, কাজাখস্তান ৭৮ হাজার, আলজেরিয়া ৪৮ হাজার ব্যারেল এবং ওমান ৪০ হাজার ব্যারেল উৎপাদন হ্রাস করবে। ঘোষণাগুলো প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় দেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস জানায়, রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক বলেছেন যে মস্কো বছরের শেষ পর্যন্ত স্বেচ্চায় হ্রাস বাড়াবে পাঁচ লাখ । পশ্চিমা দেশগুলো মূল্যসীমা আরোপের পর রাশিয়া ফেব্রুয়ারিতে একতরফাভাবে কমানোর ঘোষণা দিয়েছে।
সকলেই তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর তথাকথিত ওপেক+ গ্রুপের সদস্য, যার মধ্যে রয়েছে পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর মূল সংস্থার পাশাপাশি রাশিয়া এবং অন্যান্য প্রধান উৎপাদক৷ তাৎক্ষণিকভাবে ওপেকের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে রেলের বগি লাইনচ্যুত: ২৩ ঘন্টায়ও উদ্ধার হয়নি, তেল ছড়িয়ে পড়েছে আশেপাশের কৃষিজমিতে