আয়কর আইন-২০২১ আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, নতুন আয়কর আইন এমনভাবে করা উচিত যাতে করদাতা ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে চোর পুলিশ খেলা বন্ধ হয়।
তারা বলেন, ‘বর্তমান আইনে এমন কিছু বিধি রয়েছে যা করদাতাদের হয়রানির সুযোগ সৃষ্টি করে। আবার কর ফাঁকিরও সুযোগ রয়েছে। ফলে করদাতা ও কর কর্মকর্তা কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। নতুন আইন এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তবে আইনটি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করে আরও সময় নেয়া উচিত। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামত রাখার সুযোগ দেয়া উচিত।’
ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) যৌথ আয়োজনে বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব মতামত দেন।
প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘আইনের ক্ষেত্রে প্রণয়নকারী, প্রয়োগকারী ও মান্যকারীদের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। তা না হলে আইন লক্ষ্য অর্জন করে না।
আরও পড়ুন: করদাতাদের সংখ্যা নিয়ে সন্তুষ্ট নন অর্থমন্ত্রী
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ‘আয়কর আইনের মত আইনে মৌলিকতা আনতে সময় দরকার। যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার অর্থনীতির দক্ষতা বাড়ছে কিনা, সাম্য নিশ্চিত হচ্ছে কিনা তা দেখা দরকার।’
এনবিআর’র প্রথম সচিব (আয়কর নীতি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন,‘আয়কর এমন ব্যবস্থা এখানে বৈধ কাজ করলেও হয়রানি মনে হয়। ফলে করদাতাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। কর দিয়ে গর্ববোধ করতে হবে। দেশের মানুষ কর দিচ্ছে বলেই দেশ এগোচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন আইন বিষয়ে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পাশ হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও কাজটি দ্রুত শেষ করতে চাচ্ছে। এজন্য মনে হচ্ছে তাড়াহুড়ো করছে এনবিআর। কিন্তু এনবিআর মনে করে সকলের মতামত নিয়েই উপযুক্তভাবে আইনটি করা দরকার। এজন্য এনবিআর সময় নিয়েছে। তবে বেশি দেরি করারও সুযোগ নেই।’
আগাম কর প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘সবাই যদি অক্টোবর নভেম্বরে এসে কর পরিশোধ করে, তাহলে বছরের বাকি সময় ব্যয়ের টাকা সরকার কোথায় পাবে। এজন্য আগাম কর, উৎসে কর নেয়া হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের পদ্ধতি রয়েছে।’
বিল্ডের চেয়ারপার্সন আবুল কাশেম খান বলেন, ‘দেশ বর্তমানে একটা রূপান্তরের পর্যায়ে রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হতে যাচ্ছে। এতে সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা আসবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। দেশের রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা কম। এঁটা এক ধরনের দুর্বলতা। কর আইন, আমদানি রপ্তানি নীতির মত উদ্যোগের মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এসব নীতিমালাতে দেশিয় উদ্যোক্তাদের সুবিধা দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এসব নীতিমালা করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করা খুবই জরুরি। কিন্তু আয়কর আইন চুড়ান্ত হওয়ার পথে। ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানেন না। ব্যবসায়ীদের কাছে এনবিআরের পক্ষ থেকে মতামত চাওয়া হলেও সময় দেয়া হয়েছে খুবই কম। এজন্য আরও সময় প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকা দরকার। কর হার বাড়ানো হলে কর ফাঁকির প্রবনতাও বাড়বে। এজন্য করের হার কমিয়ে আওতা বাড়ানো দরকার।’
তিনি আগাম আয়করকে (এআইটি) একটি ‘ব্যাড ল’ উল্লেখ করে বলেন, ‘এনবিআর ধরেই নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা কর দিতে চায় না। ফলে আগেই কর কেটে নিচ্ছে। হয়ত কেউ কেউ কর ফাঁকি দিতে চায়। সেজন্য সবাইকে চোর ভাবলে তো হবে না।’
তিনি বলেন, ‘করের অ্যাসেসমেন্টেও হয়রানি হয়। সবচেয়ে বেশি হয়রানি হয় অডিটে। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা এসব সমস্যা সমাধান করতে পারলেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা তা পারেন না।’
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘কর ছাড় না দিলে পুঁজিবাজার এগোবে না। আবার আগামীতে উন্নয়ন অর্থায়নের জন্য বন্ড মার্কেট লাগবে। ফলে নতুন আইনে এ বিষয়ে সুযোগ থাকতে হবে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে সব ব্যবসার প্রতি ন্যায়সঙ্গত আচরণ চায় যুক্তরাষ্ট্র
তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে দ্বৈত কর রয়েছে। যা ‘ননসেন্স’। এঁটা ব্যবসার বাধা। হঠাৎ পরিদর্শন বন্ধ করা, ব্যবসায়ীদের গবেষণা ব্যয়ে কর ছাড়, বীমার প্রিমিয়ামকে ব্যয় হিসেবে গণ্য করার সুপারিশ করেন।’
ইআরএ ‘র সভাপতি শারমীন রিনভী সভাপতিত্বে ও ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোং এর পার্টনার স্নেহাশীষ বড়ুয়া।
এ সময় মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য দেন পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, এমসিসিআইর বোর্ড সদস্য হাসান মাহমুদ, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের(আইবিএফবি) সভাপতি হুমায়ুন কবির, আইসিএবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান খসরু,আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির।