আমাদের বন্ধুদেশ শ্রীলঙ্কা দীর্ঘদিন তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিল। অনেক প্রাণহানি হয়। প্রেসিডেন্ট থেকে অনেক নাগরিক আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন। অবশেষে তামিল টাইগারদের সমূলে উৎখাত করা সম্ভব হয় সে দেশের আর্মি কমান্ডার জেনারেল সারাথ ফনসেকার নেতৃত্বে।
অসাধ্যকে সাধন করায় সারাথের (শরৎ) জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। চারিদিকে জয় জয়কার। শুধু সামরিক শক্তি দিয়ে বিদ্রোহ নির্মূল করা যায় না এ থিওরি ভুল প্রমাণিত হলো। তখন দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন রাজাপাকসে। তিনি বীরের মর্যাদা দিলেন। চার তারকা জেনারেল, মেডেল, সম্মান সবই।
কিছুদিনের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট নিজের ভবিষ্যত রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সারাথকে চিহ্নিত করলেন। এত জনপ্রিয় ব্যক্তির প্রতি নজর পড়া স্বাভাবিক।
প্রেসিডেন্ট আর্মি কমান্ডার পদ থেকে ফনসেকাকে সরিয়ে দিয়ে জয়েন্ট ডিফেন্স স্টাফ পদে নিয়োগ দিলেন। জেনারেল সারাথ এটাকে তার ক্ষমতা খর্ব করার ষড়যন্ত্র হিসেবে বিবেচনায় নিলেন। তিনি তার ক্ষমতা খর্ব আদেশ মানতে রাজি হলেন না। পদত্যাগ করলেন ও পরবর্তী নির্বাচনে রাজাপাকসের বিপক্ষে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন। নির্বাচনী কৌশলে তিনি হেরে গেলেন।
রাজাপাকসের প্রতিহিংসা পুন:নির্বাচনের পর হিংস্রতায় রূপ নিল। তিনি জাতীয় বীরের সকল পদ পদবী হরণ করার পর তাকে জেলে প্রেরণ করলেন।
জেনারেল সারাথ ফনসেকা তার কর্তব্য পালনকালে সকল পদবীতে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আঘাতে যুদ্ধাহত হয়ে জীবন ফেরত পেয়েছেন। কোম্পানি, ব্যাটেলিয়ন, ব্রিগেড কমান্ডার ছাড়াও তিনি সেনাপ্রধান পদে থাকাকালে তামিলদের বোমা হামলায় মারাত্মক আহত হয়েছিলেন। তার সেসব কৃতিত্বও মুছে দেয়া হয়েছে।
যাইহোক, পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা এই বীরের সকল উপাধি মেডেল ফিরিয়ে দিলেন। পূর্ণ মর্যাদায় তিনি ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হলেন। মন্ত্রীও হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি বিরোধী দলের দলনেতা।
ফিল্ড মার্শাল ফোনসেকা বাংলাদেশের মিরপুর সেনানিবাসে সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের ১৯৮৭ ব্যাচের একজন গ্রাজুয়েট। এ ব্যাচের চারজন ছাত্র অফিসার পরবর্তীতে সেনাপ্রধান পদে নিয়োগ পান। তারা হলেন জেনারেল মুবিন ও জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, বাংলাদেশ, ফিল্ড মার্শাল সারাথ ফনসেকা, শ্রীলঙ্কা, জেনারেল হেনরি কইটু-জাম্বিয়া।
বীরদের নাম মুছে ফেলার উদ্যোগ সফল হয়নি। জনগণের সমর্থনে ফিল্ড মার্শাল সারাথ ফনসেকার সকল পদ পদবী বহাল রয়েছে।
লেখক: কলামিস্ট কর্নেল (অব.) মো. শাহ জাহান মোল্লা
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
আরও পড়ুন: কুমিল্লা শহরে গ্রেনেড হামলা-১৯৭১