বিরোধী দলের এক দফা আন্দোলন ঠেকাতে সরকার পরিকল্পিতভাবে লক্ষ্মীপুরে কৃষকদল নেতা সজীব হোসেনকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
বৃহস্পতিবার সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শোক মিছিল বের করার আগে সজীবের রক্ত বৃথা যাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সজীব হোসেনকে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় এবং পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। দিবালোকে এ ঘটনা ঘটে। আমাদের আন্দোলন ঠেকাতে সরকার এটা করেছে।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে বিএনপির কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ
মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে কৃষকদল নেতা হত্যার জন্য সরকারকে দায়ী করা হবে বলে জানান তিনি।
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যের জবাবে বিএনপি নেতা বলেন, ক্ষমতাসীন দলের সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হলে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটবে না।
রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না। তাই নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার আবশ্যক।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু অভিযোগ করেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সরকার এ পর্যন্ত বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৯ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে।
আরও পড়ুন: ১০ দফা দাবি এক দফায় পরিণত, শেখ হাসিনার পদত্যাগ: ফখরুল
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার আমাদের এক দফা আন্দোলন বন্ধ করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিএনপি নেতাদের টার্গেট করছে। তাদের দল এক দফা আন্দোলন শুরু করায় সরকার বেকায়দায় পড়েছে। সেই আন্দোলনে যে সজীব প্রাণ দিয়েছেন তার রক্ত বৃথা যাবে না।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘জোরপূর্বক গুম, হামলা-মামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা যাবে না। ‘আমরা এই আন্দোলনকে সফল করব। দেশের সব রাজনৈতিক দল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বর্তমান শাসন ক্ষমতাচ্যুত করতে ঐক্যবদ্ধ।’
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।
ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান অভিযোগ করেছেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর দমন, হত্যা, হামলা ও গুম করে সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চায়।
তিনি বলেন, ‘কোন ষড়যন্ত্র এবং দমনমূলক কৌশল এবার কাজ করবে না। দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। তারা তাদের এক দফা দাবি আদায় করে ছাড়বে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই লক্ষ্মীপুরে সজীবকে হত্যা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন আমান।
তিনি বলেন, এই শাসনের পতন না হওয়া পর্যন্ত তাদের দল রাজপথ থেকে পিছপা হবে না। ‘আমাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের এক দফা দাবি মেনে নিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করব।’
আরও পড়ুন: বিএনপির সঙ্গে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
পরে সজীব হোসেন হত্যার প্রতিবাদে বিকাল ৪টার দিকে নিজ কার্যালয়ের সামনে শোক র্যালি বের করেন তারা।
মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে দল ও জোটের শরিকদের পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে দলটির প্রতিবাদ নথিভুক্ত করার জন্যও এ সমাবেশ ছিল।
বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী কালো ব্যাজ বেঁধে এবং সরকারবিরোধী স্লোগান নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন।
র্যালিটি কাকরাইল ও নয়াপল্টন প্রদক্ষিণ শেষে ফকিরাপুল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
সব মহানগর ও জেলা শহরেও বিএনপির নেতাকর্মীরা শোক র্যালি বের করেন।
সরকারের পদত্যাগসহ তাদের এক দফা দাবি আদায়ে আগামীকাল জুমার নামাজের পর সারাদেশের মসজিদে মুসল্লিদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করবেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
তাদের এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ও বুধবার রাজধানীসহ সারাদেশে মিছিল করেছে বিএনপি।
মঙ্গলবার দলের মিছিলে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ, লক্ষ্মীপুরে সজীব নিহত ও কয়েক শতাধিক মানুষ আহত হয়।
আরও পড়ুন: ভোট চুরির পরিকল্পনা আছে আ. লীগের: ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে বিএনপি