তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য করতে হলে প্রথম শর্ত হলো স্বাধীনতাবিরোধীদের ত্যাগ করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ও রাজনীতিতে ভারসাম্য আনার সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে।’
শনিবার রাতে রাজধানীর বারিধারায় নিজ বাসভবনে দলের পক্ষ থেকে করা সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বি. চৌধুরী বলেন, এক স্বৈরাচারকে বিদায় করে আরেক স্বৈরাচারকে ক্ষমতায় আনা যাবে না। তাহলে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য কিংবা দেশের বিদ্যমান দুরবস্থার কখনও পরিবর্তন হবে না। কাজেই কোনো দল যাতে আর এককভাবে ক্ষমতায় আসতে না পারে, দেশে ও জনজীবনে যাতে পুনরায় আর স্বৈর সরকারের আবির্ভাব না ঘটে সে জন্যে রাজনীতিতে ভারসাম্য আনার কথা বলেছি। যতদিন পর্যন্ত ক্ষমতায় ভারসাম্য না আসবে, ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আসবে না।
আরও পড়ুন: বি. চৌধুরীকে ছাড়াই বহুল আলোচিত ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’র যাত্রা শুরু
যারা এদেশের মানচিত্রে এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না তাদের সাথে বিকল্পধারার কোনো ঐক্য হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাবেক এই রাষ্ট্রপতি গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে বলেন, ‘আমরা ইতিপূর্বে এই ঐক্যের ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই প্রক্রিয়া করে যাচ্ছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় ড. কামালের বেইলি রোডের বাসায় আমন্ত্রণ জানানো হয় বৈঠকের। সেই বৈঠক শেষে জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা দেয়ার কথা। কিন্তু আমি বিকালে তার বাসার সামনে গিয়ে ১৪-১৫ মিনিট অপেক্ষা করেছি। কিন্তু সেও বাসায় নেই, দরজা খোলারও কোনো লোক ছিল না। ভেতরে নিয়ে বসিয়ে যে এক কাপ চা খাওয়াবে সে লোকটাও পর্যন্ত ছিল না।’
‘অপেক্ষা শেষে যখন ফিরে আসছিলাম তখন তার দলের মহাসচিব মোস্তফা মহসিন মন্টু ফোন দিয়ে বলেন, আপনারা মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে চলে আসেন। কিন্তু সে এখন পর্যন্ত (রাত ৮টা) একটা ফোনও করেনি। সে তো বলতে পারত যে, সরি... আমি একটা জরুরি কাজে চলে এসেছি। বড় ভাই আপনি বসে এক কাপ চা খান, আমি আসতেছি। কিন্তু সে এটা বলার কোনো প্রয়োজনই মনে করেনি। কাজেই সাধারণভাবেই প্রশ্ন উঠে যে এটা কি তাদের পরিকল্পিত?,’ যোগ করেন বি. চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, কোনো একটি নির্দিষ্ট দলকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসানোর জন্য বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা হলে স্বেচ্ছাচার মুক্ত বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যাশার সাথে প্রতারণা করা হবে।
ড. কামালের আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আজ দুটো বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে। জনগণকে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখে স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে পরোক্ষভাবে ঐক্য গড়ে তোলার অপচেষ্টা এবং নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে বিকল্পধারার অনঢ় অবস্থানকে বিবেচনায় রেখে একটি চক্রের জাতির প্রত্যাশিত ও স্বপ্নের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে বিনষ্ট করা। কারা এই ঐক্যকে বিনষ্ট করতে চায় এটা আজ জাতির সামনে পরিষ্কার।
‘আজকের পর থেকে জাতীয় ঐক্যের নামে বিএনপির সাথে কোনো বৈঠকে বসে জাতিকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ বিকল্পধারা দেবে না। স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গ ত্যাগ করে জাতীয় সংসদে ভারসাম্যের ভিত্তিতে স্বেচ্ছাচার মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা বিএনপির পক্ষ থেকে না আসা পর্যন্ত শুধুমাত্র তাদের এককভাবে ক্ষমতায় বসানোর জন্য বিকল্পধারা দেশে কোনো চক্রান্তের সাথে সম্পৃক্ত হবে না,’ বলেন তিনি।
দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ না করায় বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, ‘বিএনপি এখানে জাতীয় ঐক্য করে, আর ২০ দলীয় জোটে জামায়াতের সাথে পরকীয়া করে। অন্যদিকে জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রব আর নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার মূল বিয়ে হচ্ছে যুক্তফ্রন্টে। আর তাদের পরকীয়া হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রেন্টর সাথে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও জাতীয় ঐক্য থেকে সরে যাইনি। আর তারা আমাদের বাদ দিয়েছেন কি না তাও জানি না। যদি বাদ দিয়ে থাকেন তাহলে তো অবশ্যই পরিষ্কারভাবে জানাবেন। তবে আমাদের কথা পরিষ্কার, বিএনপি বা কোনো দলকে এককভাবে ক্ষমতায় বসানোর লক্ষ্য নিয়ে আমরা কোনো ঐক্য করব না।’
এসময় দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ ইউসূফ, মাহবুব আলী, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, হাফিজুর রহমান ঝান্টু, ওবায়েদুর রহমান মৃধা, আসাদুজ্জামান বাচ্চু, বিএম নিজাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।