বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার বলেছেন, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তাদের দল ‘শিগগিরই’ তাদের ‘এক দফা’ আন্দোলন শুরু করবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের জন্য একটি উপযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য কাঠামো বেরিয়ে আসবে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা মূলত এক দফা আন্দোলনে আছি। খুব শিগগিরই আমরা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবো।’
তিনি আরও বলেন, ঈদুল আজহার পর নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারকে মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করতে আন্দোলন আরও জোরদার করবেন।
ফখরুল বলেন, যারা আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করছে তাদের সঙ্গে কথা বলছি, কারণ আমরা আন্দোলন বাড়াতে চাই এবং তা আরও জোরদার করা হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাতে তারা আলোচনা শুরু করেছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু করেছি (নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে) এবং আমরা একটি সেমিনারে পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে কথা বলেছি। আমরা ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্টভাবে কথা বলব।’
তিনি তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন সরকারের একটি উপযুক্ত কাঠামো নির্ধারণ করতে সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞদের এ বিষয়ে তাদের মতামত দেওয়ার আহ্বান জানান।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশা করি সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য কাঠামো পাওয়া যাবে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সংশোধনীর মাধ্যমে বর্তমান সংবিধান দলীয় ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রজাতন্ত্র জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী চলবে এবং জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে।
ফখরুল বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যখন দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে, এরপর যেকোনোভাবেই তারা একদলীয় শাসন পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন শুরু করে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার জনগণের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের অজুহাত দেখিয়ে সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তা বাতিল করেছে; যা ছিল প্রতারণা। জনগণ ও বিচার বিভাগের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে এটা করা হয়েছে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা দাবি করেন, পঞ্চদশ সংশোধনী বা সরকার কোনোটাই বৈধ নয়।
তার চেয়ে ভালো দেশ কে চালাতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘এটি তার গণতন্ত্রবিরোধী, স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী মনোভাব প্রকাশ করেছে।’
ফখরুল বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পারলে দেশ পরিচালনা ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে অনেক যোগ্য নেতা পাওয়া যাবে।
একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সরকার পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করার সদিচ্ছা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিএনপি নেতা বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে আগামী নির্বাচন কোনোভাবেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। ‘তাই আমাদের অবস্থান স্পষ্ট যে এই সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও সরকার বিরোধী দলকে দমন করতে সারাদেশে দমনমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, একদিকে তারা আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করছে, অন্যদিকে আমাদের দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তুলে নিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
ফখরুল বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে এখানে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কীভাবে আশা করেন?’
এবার ঠাকুরগাঁওয়ে তার গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করায় ফখরুল সাংবাদিকদের সঙ্গে আগাম ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।