কিডনি এমন এক প্রাকৃতিক ফিল্টার, যেটি অবিরাম রক্ত পরিশুদ্ধ করে ভারসাম্য বজায় রাখে মানবদেহে। এই স্বয়ংক্রিয় কার্যপ্রণালীতে কিঞ্চিত অসঙ্গতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সামগ্রিক রেচনজনিত কার্যাবলীতে।সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতার দিকে অগ্রসর হয়। ভেষজ চা পান এই আশঙ্কা থেকে মুক্তির একটি প্রতিরোধমূলক উপায় হতে পারে। শুধুমাত্র নিয়ত জীবন ধারার একটি জনপ্রিয় অভ্যাসই নয়; পরিমিত চা পান সুস্থতায় সমৃদ্ধির পারিচালক। তাই কিডনি থেকে দূষিত পদার্থ নিগমনে সাহায্যকারী ১০টি ভেষজ চা-এর কার্যকারিতা নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের নিবন্ধ। চলুন, চা পানের অভ্যাস থেকে সর্বোচ্চ উপযোগিতা বের করে আনতে এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।
কিডনিকে সুস্থ রাখার ১০টি ভেষজ চা
ড্যান্ডেলিয়ন চা
এই চা-এর উৎস ড্যান্ডেলিয়ন নামক উদ্ভিদ, যার বৈজ্ঞানিক নাম Taraxacum officinale। গাছের পাতা, শিকড় এবং ফুল; প্রত্যেকটি অবদান রাখে এই চা উৎপাদনে।
এর পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ, সি, কে, ই এবং ফোলেট। মানবদেহে প্রয়োজনীয় খনিজের মধ্যে এটি আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের যোগান দিতে পারে। এর শিকড়ে আছে প্রচুর পরিমাণে ইনুলিন, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে।
ড্যান্ডেলিয়নের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। রক্তে শর্করা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ড্যান্ডেলিয়ন চা বেশ কার্যকর।
ড্যান্ডেলিয়ন চা বানানোর জন্য এর পাতা বা শিকড় সংগ্রহ করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। পাতা থেকে চা বানাতে পাতাগুলো গরম পানিতে ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হয়। আর শিকড়ের বেলায় পিষে রস বের করে নিতে হয়।
আরও পড়ুন: রোজায় সুস্থ থাকার ৫টি উপায়
নেটল চা
নেটল চা-এর উদ্ভিদের নাম স্টিঙ্গিং নেটল (Stinging Nettle), যার বৈজ্ঞানিক নাম Urtica dioica।
এই গাছের পাতা চা তৈরির প্রধান উপাদান। এই পাতায় আছে ভিটামিন সি, ডি এবং কে। আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ উপাদানের পাশাপাশি আছে ফ্যাটি অ্যাসিড। এই চা পলিফেনল এবং ক্যারোটিনয়েডের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস।
নেটল চায়ে থাকা যৌগ প্রদাহ কমাতে এবং আর্থ্রাইটিসের মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে। মূত্রনালীর সংক্রমণ উপশমে এটি বেশ সহায়ক। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য জয়েন্টের ব্যথা এবং পেশির খিঁচুনি থেকে মুক্তি দিতে পারে।
নেটল চা বানাতে হলে প্রথমে হাতে গ্লাভস পরে তাজা নেটল পাতা সংগ্রহ করতে হবে। পাতাগুলোকে গরম পানিতে ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখার পরেই এটি চা হিসেবে পানের উপযোগী হয়ে ওঠে।
হিবিস্কাস চা
হিবিস্কাস চা-এর উদ্ভিদের নাম হিবিস্কাস; বৈজ্ঞানিক নাম Hibiscus sabdariffa। গাছের শুকনো ক্যালিস তথা ফুলের বাইরের অংশ থেকে চা তৈরি করা হয়। লাল রঙের এই চায়ে আছে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আয়রন ও ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ।
স্বতন্ত্র ট্যাঞ্জি গন্ধের জন্য সুপরিচিত এই চা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি নিয়মিত সেবনে স্বল্প মাত্রার কোলেস্টেরল উন্নত হতে পারে। হিবিস্কাস চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো ফ্রি র্যাডিক্যাল এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এছাড়া এর হজমে সহায়তা করা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষমতা আছে।
হিবিস্কাস ক্যালিস সংগ্রহের পর শুকানোর পরে সেগুলো ৫-১০ মিনিট গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখলেই চা তৈরি হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: গরমে শরীর সতেজ রাখতে আইস-টি
পার্সলে চা
পার্সলে গাছের (বৈজ্ঞানিক নাম Petroselinum crispum) পাতা থেকে প্রাপ্ত পার্সলে চা প্রচুর পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যগুণ সম্পন্ন। অন্যান্য ভেষজ চায়ের থেকে ভিন্ন এই চা বেশ সুস্বাদু। ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ সমৃদ্ধ পার্সলে চা কিডনির কার্যকারিতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। এতে করে দেহ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি পায়।
পার্সলে চায়ে আছে মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্য। এতে থাকা তেলের মতো উপাদানগুলোর কারণে প্রস্রাবের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এতে করে শরীরে থাকা টক্সিন বের হয়ে যায় এবং একই সঙ্গে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে যায়।
পার্সলে চায়ের উপকারিতা উপভোগ করতে গরম পানিতে এক মুঠো তাজা পার্সলে পাতা প্রায় ৫-১০ মিনিট জ্বাল দেওয়াই যথেষ্ট।
ক্র্যানবেরি চা
Vaccinium macrocarpon বৈজ্ঞানিক নামের ক্র্যানবেরি উদ্ভিদের ফল থেকে তৈরি হয় ক্র্যানবেরি চা। সুস্বাদু এই ফলটি অনেক স্বাস্থ্যগুণের আধার। এতে থাকা প্রাকৃতিক যৌগ প্রোঅ্যান্থোসায়ানিডিন্স মূত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।
এই চায়ে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ফলে এটি শরীরকে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধক্ষম করে তোলে। মূত্রনালীর প্রদাহ এবং অস্বস্তি দূর করাতেও এই চা অপরিসীম ভূমিকা পালন করে।
ক্র্যানবেরি চা তৈরি করতে হলে প্রথমে পানি সিদ্ধ করে সামান্য ঠাণ্ডা করতে হবে। অতঃপর তা তাজা ক্র্যানবেরি ভর্তি কাপে ঢেলে ঢেকে রাখতে হবে। প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর তৈরি চা পানের উপযোগী হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: এই গরমে ট্যানিং এড়াতে কিছু টিপস