জাদুকরি শব্দে প্রতিটি রচনার মধ্য দিয়ে বাঙালি মধ্যবিত্তকে চিত্রিত করেছিলেন এক অপূর্ব মায়ায়। জীবদ্দশায় তিনি ২০০টিরও বেশি বই লিখেছেন, যার প্রতিটি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। সেইসাথে নিজের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে ৮টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন।
হালআমলে হুমায়ূন আহমেদের বই পড়েননি এমন সাহিত্যানুরাগী কমই পাওয়া যাবে। তার বেশিরভাগ বই বাংলাদেশের ‘বেস্ট সেলার’ স্বীকৃতি পেয়েছে। বহুমুখী এ কথাসাহিত্যিক বেশ কিছু কাল্পনিক চরিত্রের স্রষ্টাও। যার মধ্যে দিয়ে হুমায়ূন আহমেদ সমাজকে চিত্রিত করেছেন। সৃজনশীল এ লেখকের মৃত্যুবার্ষিকীতে (১৯ জুলাই) তার স্মরণে তার রচিত উপন্যাসের জনপ্রিয় কিছু কাল্পনিক চরিত্র নিয়ে আজকের এ আয়োজন।
হুমায়ূন আহমেদের চিত্রিত জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র
বাকের ভাই
বিখ্যাত বাকের ভাইয়ের কথা সকলেরই জানা। ১৯৯০ সালে হুমায়ূন আহমেদের তৈরি ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে স্থানীয় এক ভবঘুর রুপে অভিনয় করেছিলেন বিখ্যাত অভিনেতা ও সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এতে সমাজের সকল অন্যায় ও অসহায়দের পক্ষ নিয়ে তাকে সংগ্রাম করে যেতে দেখা যায়। স্থানীয়রা তাকে ভালোবেসে ‘বাকের ভাই’ বলে ডাকতেন। নাটকে শেষ দিকে তার এক সহযোগীর বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ওই সময়ে তিনি এমনই শক্তিশালী চরিত্রে পরিণত হয়েছিলেন যে, বাকের ভাই চরিত্রটিকে ভালোবেসে নাটকে তাকে মৃত্যুদণ্ড না দেয়ার জন্য রাজধানীতে মিছিল বের করেছিলেন দর্শকরা।
আরও পড়ুন: হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে ২ ছেলেকে নিয়ে নুহাশপল্লীতে শাওন
মিসির আলী
মিসির আলী হলেন হুমায়ূন আহমেদের রচিত ধারাবাহিক উপন্যাসে হাজির করা আরেক কাল্পনিক চরিত্র। উপন্যাসগুলোতে মিসির আলীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। মিসির আলী যদিও পেশাদার মনোচিকিৎসক ছিলেন না, তবে তার প্যারাসাইকোলজিতে অনন্য আগ্রহ ছিল এবং তাকে নিয়ে অসামান্য কিছু কৌতুক রয়েছে। উপন্যাসগুলোতে তাকে আমরা মানুষকে বিভিন্ন মানসিক রোগের চিকিৎসা সম্পর্কিত সেবা দিয়ে থাকতে দেখলেও এবং বিভিন্ন ধরনের রহস্য সমাধানে দক্ষ হলেও তিনি এ বিশেষ সেবার জন্য কারও কাছ থেকে কোনো ফি বা অর্থ নিতেন না। হুমায়ূনের লেখা মিসির আলী সিরিজের ২০টি বই রয়েছে।
হিমু
হুমায়ূন আহমেদের চিত্রিত কাল্পনিক চরিত্রের আরেক প্রভাবশালী যুবক চরিত্র হলো হিমু বা হিমালয়। হিমু চরিত্রটি এতই ভালোভাবে নিয়েছিলেন যে লেখক তাকে নিয়ে ২১টি উপন্যাস রচনা করেছেন। উপন্যাসগুলোতে হলুদ পাঞ্জাবি পরা হিমুকে একটি স্বতন্ত্র জীবনধারা মেনে চলতে দেখা গেছে। তার বাবার লিখে যাওয়া ডায়েরির বর্ণনা মেনে হিমুকে তার বয়সের অন্যান্য যুবকদের মতো জীবন ফেলে খালি পায়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। পুলিশ অফিসার, প্রতিবেশি, আত্মীয়, চায়ের দোকানদার ও রাস্তার ভিক্ষুককে তার সমীহ করতে দেখা গেছে।
শুভ্র
হুমায়ূন আহমেদ তার কাল্পনিক চরিত্রগুলোর মধ্যে শুভ্রকে পাঠকদের কাছে রোল মডেল হিসেবে চিত্রিত করেছেন। কাল্পনিক চরিত্র শুভ্রকে তিনি সত্যিকারের মানুষের চরিত্রে চরিত্রায়নের প্রচেষ্টা করেছেন। একেকটি উপন্যাসে তিনি শুভ্রকে বহুমুখী চরিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।