কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ভাসতে থাকা বিশালাকার মৃত তিমিটি অবশেষে প্রায় ১০ ঘন্টা পর বালুচরে আটকা পড়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সায়মন বিচে এই মৃত তিমিটি আটকা পড়ে।
১৯ এপ্রিল ভোরে তিমিটি সৈকতের বালির নিচে পুঁতে ফেলা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি সৈকতের কাছে সমুদ্রের পানিতে ভাসতে দেখা গেছে বিশালাকৃতির একটি মৃত তিমি। দুপুরে শরীরে রশি বেঁধে তিমিটিকে উপকূলে তুলে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন সৈকতের স্বেচ্ছাসেবীরা।
বিকাল চারটার দিকে ভাটা শুরু হলে তিমিটি গভীর সাগরের দিকে ভেসে যেতে থাকে। পরে কলাতলী সায়মন বিচে এসে আটকা পড়ে তিমিটি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটক সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ।
তিনি জানান, প্রায় ১০ ঘন্টা সাগরে ভাসার পর এটি কূলে এসে বালুচরে আটকা পড়ে। এটি অর্ধগলিত অবস্থায় ছিল।
আরও পড়ুন: কক্সবাজার উপকূলে ভেসে এসেছে বিশাল মৃত তিমি
তিনি আরও বলেন যে মনে হয় তিমিটির ২০-২৫ দিন আগে মৃত্যু হয়েছে। এটিকে হত্যা করা হয়েছে বলেও মনে হয়ছে। কারণ, এর শরীরের জাল মোড়ানোসহ বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুর ১২টার দিকে ১০-১২ জন স্বেচ্ছাসেবী দ্রুতগতির কয়েকটি নৌযান (স্পিডবোট) নিয়ে মৃত তিমিটির কাছে যান। এরপর তারা রশি দিয়ে তিমিটি নৌযানের সঙ্গে বেঁধে কূলে টেনে আনার চেষ্টা করেন। বিশালাকৃতির হওয়ার কারণে তিমিটি ঘটনাস্থল থেকে নড়ানো সম্ভব হয়নি।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, তিমিটির গায়ে কাটা ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এটিকে মেরে শরীরের মৃল্যবান অংশ নিয়ে পাচার হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য ময়নাতদন্তের প্রয়োজন ছিল।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার জানান, ভেসে আসা মৃত তিমি ব্রাইডস জাতের। এর বৈজ্ঞানিক নাম বেলিনিওপেট্রা ইডিনি।
তিনি আরও বলেন, ইতোপূর্বে ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল দুইটি তিমি হিমছড়ির ঠিক একই পয়েন্টে ভেসে এসেছিল। যে দুটি তিমি গত বছর ভেসে এসেছিল সেগুলোও বেলিনিওপেট্রা ইডিনি প্রজাতির তিমি ছিল বলে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছিলাম।
বেলাল হায়দার বলেন, ভেসে আসা তিমির শরীরে জালের বিশাল রশি পেঁচিয়ে ছিল। মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা যাচ্ছে মাছ ধরার বিশাল জালে আটকা পড়ে এবং গুরতর আঘাত প্রাপ্ত হয়ে কিংবা অন্য কোনো কারণে তিমিটি মারা গেছে। সমুদ্র শব্দ দূষণের কারণে পরস্পর যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে দিকভ্রান্ত হয়েও উপকূলের অগভীর জলে এসে আটকা পড়ে মারা যায় তিনি। কখনও সঙ্গীর মৃত্যু হলেও এদেরকে সৈকতের অগভীর জলে আত্মহুতি দিতেও দেখা যায়।
আরও পড়ুন: সৈকতে ভেসে এলো বেলিন প্রজাতির মৃত তিমি!