এসব অবৈধ ইটভাটা থেকে প্রতিনিয়ত নির্গত কালো ধোঁয়া ও ছাইয়ের কারনে ওই এলাকায় কৃষকরা কোনো ফসল ফলাতে পারছেন না। হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কেরানীগঞ্জের কৃষকরা।
এদিকে, ইটভাটাগুলোতে অবৈধভাবে কাঠ, রাবার, গাড়ির টায়ার ও কয়লা পোড়ানোর কারণে কেরানীগঞ্জ ও রাজধানীর আশপাশের এলাকাসহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) থাকা হাজার হাজার বন্দী ও হাজতবাসীসহ কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
শুধুমাত্র রাজেন্দ্রপুর এলাকায় কেন্দ্রীয় কারাগারের দেয়ালের চারপাশ ঘিরেই রয়েছে ১৫টি ইটভাটা। এসব অবৈধ ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে কারা কর্তৃপক্ষ জেলখানার আশপাশ থেকে ইটভাটাগুলো বন্ধের জন্য গত দুবছরে পরিবেশ অধিদপ্তরেকে ১২ বার চিঠি পাঠিয়েছে। তাতেও সেগুলো বন্ধ হয়নি।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহেদা বেগমের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে দু-চারটি ইটভাটাকে আর্থিক জরিমানা করলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। এতে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ কিন্তু অবস্থা থেকে পরিত্রাণ মিলছে না।
ওই এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, স্থানীয় কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে তিনি বছরের পর বছর ওই আড়াইশো অবৈধ ইটভাটাগুলো চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী।
রাজধানী ও ঢাকার কেরানীগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, রুপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ও মুন্সিগঞ্জসহ তার আশপাশ এলাকায় পরিবেশ দূষণমুক্ত করতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হাইকোর্টের একটি রিটপিটিশনের (মামলা নং-৩৬৭৬/২০১০) আদেশে, বুড়িগঙ্গা নদীর পানিদূষণকারী ডাইং কারখানা ও রাজধানী আশপাশ এলাকার সকল ইটভাটা বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (ডিজি) নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু গত ডিসেম্বর মাস এ আদেশ পালন করতে ব্যর্থ হয় পরিবেশ অধিদপ্তর।
এদিকে হাইকোর্ট গত জানুয়ারি মাসে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে তলব করেন এবং ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীর পানিদূষণে জড়িত কারখানা ও বায়ুদূষণ রোধে রাজধানীর আশপাশের এলাকার সকল ইটভাটা বন্ধ করতে নির্দেশ দেন।
হাইকোর্টের ওই আদেশের পর, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর, দোলেশ্বর, জাজিরা ও মোল্লারহাট এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে ওই চারটি এলাকায় এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে ১৫টি অবৈধ ইটভাটাসহ মোট আড়াইশো ইটভাটা চালু রয়েছে।
অবৈধ ইটভাটাগুলো এখনও কেন বন্ধ করা হচ্ছে না এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত দেবনাথ জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর যখনই ইটভাটাগুলোতে অভিযান চালাতে চায় আমরা তখনই তাদেরকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশসহ জনবল দিয়ে জেল জরিমানা করা অব্যাহত রেখেছি।
গত ৬ মাসে ভ্রাম্যমান আদালত কয়েক লাখ টাকা জরিমানা ও ৪টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দিয়েছে বলে জানা যায়।
শনিবার সকালে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ঢাকা।