খুলনা বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা আগের দুদিনের তুলনায় কম। তবে বেড়েছে শনাক্তের সংখ্যা। একই সময়ে বিভাগে ৯৪৫ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় তিনজন, কুষ্টিয়ায় তিনজন, ঝিনাইদহে দুজন, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, বাগেরহাট এবং নড়াইলে একজন করে মারা গেছেন।
এর আগে রবিবার (২০ জুন) আগের ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে সর্বোচ্চ ২৮ জনের মৃত্যু এবং ৭৬৩ জনের করোনা শনাক্তের কথা জানানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন: মঙ্গলবার থেকে ৭ জেলায় ‘লকডাউন’
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৪৫ হাজার ৯৭৭ জন। আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩৭ জনে। এ সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৪ হাজার ৬২৭ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জেলাভিত্তিক করোনা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, খুলনায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১৭৫ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১২ হাজার ৯৯৬ জন। মারা গেছে ২১১ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার ৫৪ জন।
এদিকে সোমবার (২১ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গে খুলনার পৃথক তিনটি হাসপাতালে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৯ জন করোনা পজিটিভ ও একজন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে ফাইজারের টিকা দেয়া শুরু
খুলনা করোনা হাসপাতালের ফোকাল পার্সন ও খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে চার জন করোনা আক্রান্ত হয়ে এবং একজন উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া ১৩০ শয্যার করোনা হাসপাতালে সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৬১ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। যার মধ্যে রেড জোনে ১০২ জন, ইয়ালো জোনে ২০ জন, এইচডিইউতে ১৯ জন এবং আইসিইউতে ২০ জন চিকিৎসাধীন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৩২ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৩ জন।
খুলনা জেনারেল হাসপাতাল করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. কাজী আবু রাশেদ জানান, সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এখানে ১৫ জন ভর্তি হয়। এর মধ্যে ডুমুরিয়ার মাগুরাঘোনার একজন মারা গেছেন।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের মুখপাত্র ডা. সাদিয়া মনোয়ার উষা জানান, সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় ৬১৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৭৫ জন পজিটিভ হয়েছেন। আক্রান্তের হার ২৮ শতাংশ। এ সময়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা বটিয়াঘাটা, দিঘলিয়া ও মহানগরীর সোনাডাঙার বাসিন্দা।
খুলনার বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সেখানে ৭৪ জন পজিটিভ রোগী ভর্তি আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চার জন পজিটিভ রোগী মারা গেছেন। হাসপাতালে ২৮টি নমুনা পরীক্ষায় ১৯ জন পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন।
অপরদিকে জেলা করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খুলনা জেলা ও মহানগরীতে আজ ২২ জুন থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত বিধি-নিষেধ আরোপ এবং লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনায় মোট আক্রান্ত ১৭ কোটি ৮৪ লাখের বেশি
খুলনার জেলা প্রশাসক এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল হোসেন এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির কারণে ২২ জুন থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত সকল ধরণের দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমল ও কোচিং সেন্টারসমূহ বন্ধ থাকবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও কাঁচাবাজারের দোকান প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। উক্ত সময়ের মধ্যে হোটেল-রেস্তোরাগুলো পার্সেল আকারে খাবার সরবরাহ করতে পারবে। ঔষধের দোকান সার্বক্ষণিক খোলা রাখা যাবে।
সবধরণের পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জেলার অভ্যন্তরে সকল ধরণের সাপ্তাহিক হাট/গরুর হাট বন্ধ থাকবে। জেলার অভ্যন্তরে অথবা আন্ত:জেলা গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ থাকবে। খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের আগমন ও বহিরাগমন বন্ধ থাকবে। ইজিবাইক, থ্রি-হুইলারসহ যান্ত্রিক যানবাহন বন্ধ থাকবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত কোনভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। বাইরে অবস্থানকালে সকলকে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। তবে সরকারি-বেসরকারি অফিসের জরুরি কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস চলাকালীন তাদের নিজ নিজ অফিসের পরিচয় পত্র নিয়ে বাইরে চলাচল করতে পারবে।