মিডিয়ার বদৌলতে আলোচিত হওয়ায়, অনেকে দেখতে আসেন তাদের। এসময় আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তাদেরকে বরণ করে নেয়া হয় ফুল দিয়ে।
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর ও বাংলাদেশ-ভারত বর্ডার ভিকটিম রেসকিউ কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, গত ২৯ আগস্ট ভারতের ধুবড়ি আদালত প্রায় চার মাসের হাজতবাস শেষে মুক্তির আদেশ দেয় তাদের। অন্যান্য অফিসিয়াল কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর বুধবার দুপুরে লালমনিরহাট জেলার চেংরাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।
মুক্তিপ্রাপ্তরা হলেন- সাইফুল ইসলাম, ছবিয়ার রহমান, চাঁন মিয়া, আবুল ফরিশ, আনোয়ার হোসেন, রাজা মিয়া, মাইদুল ইসলাম, মানিক মিয়া, রেজাউল করিম, সহিদুল ইসলাম, নিরু মিয়া, হযরত আলী, আনারুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, নবিকুল ইসলাম, বিপ্লব মিয়া, এছানুল হক, আবু হানিফ, নুরুল হক, আবু বক্কর সিদ্দিক, আয়নাল হক, শাহ আলম, মো. হাফিজুর, আলম মিয়া ও ইউনুস আলী। তবে এর আগে বকুল মিয়া নামের একজন ধুবড়ি জেলহাজতে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে ২৬ জন টিমের ২৫ জন মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলেন।
গত ৩ মে দেশে ফেরার সময় ভ্রমণ ভিসা নিয়ে ভারতে যাওয়া ২৬ বাংলাদেশিকে আটক করে ভারতের ধুবড়ি পুলিশ। এদের একজন ভারতে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আটককৃতরা বৈধ পাসপোর্ট ও তিন মাস মেয়াদের ভ্রমণ ভিসায় ভারতে গিয়েছিল। করোনার সময় লকডাউনের ফলে তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ধুবড়ি পুলিশ তাদের আটক করে।
অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন আরও জানান, বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে ভারত সরকারের প্রসিকিউশন মামলাটি কলঅফ করার সম্মতি দেয়। এরই প্রেক্ষিতে সকল পক্ষের আইনজীবীদের শুনানির পর ধুবড়ি আদালতের বিচারক জেলহাজতে আটক ২৫ জন বাংলাদেশিকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি এবং মামলাটি নথিজাত করার আদেশ দেয়। এরমধ্য দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহার হলো।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন সময় কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের ২৬ বাংলাদেশি ভারতে যান। বৈধ পাসপোর্ট ও ভ্রমণ ভিসা থাকলেও ভারতে দ্বিতীয় ধাপের লকডাউন চলার মধ্যে গত ২ মে ওই ২৬ জন বাংলাদেশি দুটি মিনিবাসে আসামের জোরহাট জেলা থেকে দেশে ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পশ্চিমবঙ্গের চেংরাবান্ধা চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা ছিল তাদের।
ভারতে জেলে ও খামারকর্মী হিসেবে কাজ করা এসব বাংলাদেশিকে পরদিন (৩ মে) সকালে বাহালপুর এলাকা থেকে আটক করে আসামের ধুবড়ি জেলা পুলিশ। করোনা পরীক্ষার পর তাদের পাঠানো হয় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে। গত ৫ মে ওই ২৬ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং ফরেনার্স (সংশোধিত) অ্যাক্ট, ২০০৪ এবং পাসপোর্ট অ্যাক্ট, ১৯৬৭’র ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়ের করে দেশটির পুলিশ।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাসপোর্টধারী এসব বাংলাদেশি টি-ওয়ান ভিসা নিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এই ভিসাধারীদের কাজের অনুমতি না থাকলেও আসাম পুলিশের অভিযোগ, এই বাংলাদেশিরা রাজ্যের জোরহাট, গোলাঘাট ও শিবসাগর এলাকায় কর্মসংস্থান কার্যক্রমে যুক্ত থেকে ভিসার শর্ত ভঙ্গ করেছেন।
তাদের মুক্তির দাবিতে কুড়িগ্রামে একাধিকবার মানববন্ধন করেন আটক ব্যক্তিদের স্বজনরা। এরমধ্যে গত ১ জুলাই কারা হেফাজতে বকুল মিয়া নামে এক বাংলাদেশি মারা গেলে চারদিন পর তার মরদেহ দেশে স্বজনদের কাছে ফেরত পাঠানো হয়।