রবিবার রাতে হঠাৎ করে ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের গেট খুলে দেয়ায় তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতি পরিবর্তনে দহগ্রামের তিনটি ওয়ার্ডের তীরবর্তী এলাকা লন্ডভন্ড করে ফেলে।
শত শত পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই, বসতভিটা, আবাদি জমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে দিন যাপন করছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, তিস্তা নদী ভারতীয় অংশে ভাঙছে না, অনবরত ভাঙছে বাংলাদেশি অংশে। ফলে বিলীন হচ্ছে দহগ্রাম আঙ্গরপোতার বিস্তীর্ণ এলাকা। এখানকার সর্বস্ব হারানো পরিবারগুলো দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সীমান্তের ওপারের মেখলিগঞ্জ দিয়ে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামে প্রবেশ করেছে ভারতের সিকিমে উৎপত্তি হওয়া নদী তিস্তা। এরপর কিছুটা পথ বেয়ে দহগ্রাম ইউনিয়নের সর্দারপাড়া নামক এলাকা। ওই দিন রাতেই তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় সবগুলো গেট বন্ধ করে দেয়। এতে পানির গতি পরিবর্তন হয়ে দহগ্রামের সর্দারপাড়া নামক এলাকায় ঢুকে পড়ে তিস্তার পানি।
এদিকে, তিস্তা এমন ফুলে ফেঁপে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ রবিবার রাতে বিশেষ সতর্কতা জারি করে। লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। হাতীবান্ধা-বড়খাতা বাইপাস সড়কে পানির চাপ ঠেকাতে এলাকার লোকজন বালির বস্তা ফেলছে। এসময় নদীর পানি উপচে তীরবর্তী এলাকাগুলোকে প্লাবিত করে, ভাসিয়ে নিয়ে যায় মানুষের বাড়িঘর-বতসভিটা।
আবার বানের পানি নামতে না নামতে শুরু হয় আগ্রাসী ভাঙন। নিঃস্ব হচ্ছেন নদীপাড়ের অনেক মানুষ।
বাঁধ ভেঙে পানির পথ পরিবর্তন করে ঘূর্ণিঝড়ের মতই প্রায় দেড় কিলোমিটার প্রবল স্রোতে পানি ঢুকে ঘরবাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি, পাকা রাস্তাসহ ফসলি জমি বিলীন হয়ে যায়। ভাঙনের শিকার মানুষগুলো বসতবিটা-আবাদি-জমিসহ সবকিছু হারিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে বাঁধ, রাস্তা বা অন্যের জমিতে।
ওই এলাকার আফরোজা বেগম বলেন, ‘তিস্তার পানি এসেই এভাবে বাড়ি ঘরসহ সব কিছু ভেঙে নিয়ে চলে যাবে এটা কোনোদিন ভাবতে পারিনি। ৩০ বছরেও এমন বন্যা আমার চোখে পড়েনি। মনে হয়েছে এটি একটি ঘূর্ণিঝড়। যে দিক দিয়ে পানি চলে গেছে সব ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের কিছু চাওয়ার নেই, শুধু একটি বাঁধ নির্মাণ হলেই দহগ্রামের মানুষ সব কিছুই থেকে রক্ষা পাবে।’
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জানান, প্রতি বছরে দহগ্রামই তিস্তার ভাঙনে এলাকা ছোট হয়ে যাচ্ছে। তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নিলে দহগ্রাম ইউনিয়নটি বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে। এ ভূখণ্ডটির অস্তিত্ব রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসার আবেদন জানান তিনি।