চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার দই বিক্রেতা জিয়াউল হক (৯১) নিজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হলেও শত শত মানুষের শিক্ষার আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছেন।
চামামুসরিভুজা গ্রামে বসবাসকারী জিয়াউল সমাজের কল্যাণে তার জীবন উৎসর্গ করেছেন। শিক্ষা ও বিভিন্ন কমিউনিটি সেবার মাধ্যমে তার চারপাশের মানুষের জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছেন।
অন্যের জীবনমান উন্নয়নে আজীবন অঙ্গীকারের স্বীকৃতিস্বরূপ জিয়াউল হক এ বছর সমাজসেবা ক্যাটাগরিতে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘একুশে পদক’ পেয়েছেন।
জিয়াউল তার সম্প্রদায়ের একটি পরিচিত মুখ। ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে দই বিক্রি করছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ভ্যানচালক বাবা ও চা বিক্রেতা মায়ের মেয়ে ফুটবল প্রশিক্ষণে যাচ্ছে পর্তুগাল
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত একুশে পদকপ্রাপ্তদের তালিকায় জিয়াউল নাম দেখা যায়। এর আগে ২০০৬ সালের 'সাদা মনের মানুষ' পুরস্কারসহ বিভিন্ন ধরনের সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
খবর পেয়ে উচ্ছ্বসিত জিয়াউল এই স্বীকৃতিকে তার সামাজিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার প্রেরণা হিসেবে দেখছেন। দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির পরে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেমে যায়। জিয়াউল তার অপ্রাপ্তিকে অন্যদের লেখাপড়া করার আশা পূরণের মিশনে পরিণত করেন।
তিনি আর্থিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তা করেন। তার দই বিক্রির টাকা থেকে বই এবং অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করেন।
১৯৬৯ সালে, জিয়াউল তার বাড়িতে একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে এখন উপন্যাস থেকে শুরু করে শিক্ষামূলক বিভিন্ন বইসহ প্রায় ১৪ হাজার বই রয়েছে। যা তিনি স্থানীয় শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে সরবরাহ করেন।
শিক্ষার বাইরেও তিনি গৃহহীনদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করেছেন। বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য কূপ খনন করেছেন এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের শীতবস্ত্র ও কোরআন দান করেছেন।
জিয়াউল নিজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে না পারলেও স্থানীয় শিশুদের শিক্ষা লাভের সুযোগ দিতে পারায় আন্তরিক তৃপ্তি পান। তার প্রচেষ্টায় শিশু স্কুলে ভর্তি হয়েছে। এসব কাজ করতে পেরে তিনি গর্বিত।
জেলাবাসীর সঙ্গে জিয়াউলের পরিবার এই পদকপ্রাপ্তির স্বীকৃতি উদযাপন করছে। ভোলাহাটের স্থানীয় সাংবাদিক রুবেল আহমেদ এবং আরও অনেকে জিয়াউলের চেতনা এবং সততার প্রশংসা করেছেন।
যুবা ও শিক্ষাবিদদের উপর তার গ্রন্থাগার এবং জনহিতকর কাজের গভীর প্রভাবের কথা স্বীকার করেছেন তারা। জিয়াউল হকের কর্মকাণ্ড অনুসরণীয়।