এ ছাড়া তার হাতের ২টি নখও উপড়ে ফেলা হয়েছে। আঘাতের মধ্যে ৯৭টি লিলাফোলা এবং ১৪টি জখমের চিহ্নও ছিল।
রিপোর্ট অনুসারে, রায়হানের পাকস্থলি খালি ছিল এবং সেখানে এসিডিটি লিকুইট ছাড়া আর কিছুই ছিল না। অতিরিক্ত আঘাতের কারণে দেহের অভ্যন্তরে রগ ফেটে ইন্টারনাল ব্লিডিং হয়েছে। মৃত্যুর ২ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে এসব নির্যাতন চালানো হয়। এছাড়া তার শরীরে চামড়ার নিচ থেকে প্রায় ২ লিটার রক্ত পাওয়া গেছে।
রায়হানের লাশের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। নির্যাতনের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ফরেনসিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বলে জানান ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. মো. শামসুল ইসলাম।
শনিবার রাতে গত ১১ অক্টোবর প্রথম ময়নাতদন্তের প্রাথমিক এ প্রতিবেদন তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রায়হান হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রীর দায়ের করা মামলার তদন্ত করছে পিবিআই।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনুযায়ী, গত ১০ অক্টোবর রাত ৩টা ৯ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে স্বাভাবিক অবস্থায় রায়হানকে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে আনা হয়। পরে সকাল ৬টা ২৪ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে ফাঁড়ি থেকে বের করা হয়। ৬টা ৪০ মিনিটে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান।
ওই হাসপাতালেই বেলা ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ১৫ অক্টোবর সেই ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, রায়হানের মৃত্যুর ২ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। সে হিসেবে ফাঁড়িতে আনার পর থেকেই তার ওপর নির্যাতন চলে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, রায়হানের ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুল আর বাম হাতের অনামিকার নখ উপড়ানো ছিল। অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ কারণ ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়ার পর বলা যাবে বলে প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার সকালে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের জন্য নগরের আখালিয়া নবাবী মসজিদ পঞ্চায়েত গোরস্থান থেকে রায়হানের লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে ফের দাফন করা হয়। তবে ওইদিনের রিপোর্ট পেতে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
গত ১১ অক্টোবর ভোর রাতে নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার যুবক রায়হান আহমদকে পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে এনে নির্যাতন করা হয়। এরপর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে ১২ অক্টোবর রাতে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর আকবরসহ ৪ পুলিশকে বরখাস্ত ও ৩ জনকে প্রত্যাহার করা হয়। ১৩ অক্টোবর বিকাল থেকে আকবর পলাতক রয়েছেন।