ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈলে পুলিশের গুলিতে শিশু নিহতের ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রামকৃষ্ণ বর্মনকে প্রধান করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা তারেক আহমেদ বেগ ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।
আগামী সাতদিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন বলে জানিয়েছেন রাণীশংকৈল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রজিত সাহা।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাণীশংকৈলে নির্বাচনী সহিংসতার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত শিশু কন্যা আশার জানাযা সম্পন্ন হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের একটি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার পর পুলিশের গুলিতে ৯ মাস বয়সী এক শিশু নিহত হয়। ২৭ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাচোর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুটির নাম সুরাইয়া আক্তার আশা। সে মীরডাঙ্গী গুচ্ছগ্রাম এলাকার বাদশার আলীর মেয়ে।
ওই কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার পর পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকেরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তখন পুলিশ হামলা ঠেকাতে গুলি ছুড়ে। শিশুটি তখন মায়ের কোলে ছিল। নিহত শিশুর মা মিনারা বেগম বলেন, আমি মেয়েকে নিয়ে বাড়ির পাশের গলিতে দাঁড়িয়েছিলাম। এ সময় পুলিশের গুলি আমার মেয়ের মাথায় এসে লাগে। গুলিতে তার মাথার খুলি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: ইউপি নির্বাচন: ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের গুলিতে শিশু নিহত
এ ঘটনায় বুধবার রাতে রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম জাহিদ ইকবালসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে বাচোর ইউনিয়নের খুটিয়াটুলি এলাকায় কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে উত্তেজিত জনতা। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে আনেন। দুই পুলিশ সদস্যকে চিকিৎসার জন্য ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পরে পৌরশহরের শিবদিঘি যাত্রী ছাউনি মোড় অবরোধ করে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে জনতা। তারা আঞ্চলিক সড়কটি কয়েক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে ও পুলিশকে আক্রমণ করে। তারা ২ পুলিশ সদস্যকে মারধর করে। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইন্দ্রজিত সাহা'র নেতৃত্বে বিজিবি ও অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
কিন্তু উদ্ধারকৃতদের নিয়ে ফেরার পথে উত্তেজিত জনতা নিহত শিশুর লাশ নিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং রাণীশংকৈল থানা ঘেরাও করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। বিজিবি’র আর একটি দল থানার সামনে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ফিরোজ আলম বলেন, নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় আহত ১১ ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আমরা তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছি। এক সপ্তাহের মধ্যে তারা তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবেন। নিহতের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। তাদেরকে সব ধরনের সরকারি সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।