বরিশালের কালাবদর নদে কুয়াশায় নিয়ন্ত্রণ হারানো লঞ্চের ধাক্কায় চারটি জেলে নৌকা ডুবেছে।
এতে দুই জেলে নিখোঁজ হওয়ার পর বিক্ষুদ্ধ জেলে ও স্থানীয়রা লঞ্চ ভাংচুর, কর্মচারীদের মারধর এবং মালামাল ও টাকা লুট করেছে বলে অভিযোগ করেছেন এমভি প্রিন্স অব রাসেল-৫ লঞ্চের সুপারভাইজার।
এছাড়া বিক্ষুদ্ধরা নৌ পুলিশের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে।
সোমবার ভোর রাত থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত মেহেন্দিগঞ্জের চর শেফালী লঞ্চ ঘাট এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।
নিখোঁজ দুই জেলে হচ্ছে উপজেলার বরজালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. বাকীউল্লাহ সিকদার (৪০) ও একই ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাকের মৃধা (৩৫)।
আরও পড়ুন: রাজধানীর মানিকদিয়ায় নৌকা ডুবে যুবকের মৃত্যু
উলানিয়া নৌ-পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেন জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এমভি প্রিন্স অব রাসেল-৫ লঞ্চ চর শেফালী ঘাটে নোঙর করতে গিয়ে মাছ ধরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ধাক্কা দেয়।
এতে চারটি নৌকা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ডুবে যায়। এসব নৌকার অধিকাংশ জেলেরা লাফিয়ে নদীতে পড়ে রক্ষা পেলেও দুই জন নিখোঁজ রয়েছে।
তাদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা চেষ্টা করছে।
পরিদর্শক ফারুক আরও জানান, ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা লঞ্চের কর্মচারীদের মারধর, ভাংচুর ও লুট করেছে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান এসে জনতাকে শান্ত করে।
বর্তমানে লঞ্চ তাদের হেফাজতে রয়েছে। যাত্রীদের বিকল্প নৌযানে গন্তব্যে পাঠানো হয়েছে।
মেহেন্দিগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাদের ফরাজী বলেন, লঞ্চের ধাক্কায় কয়েকটি জেলে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধারে ডুবুরিরা তল্লাশি চালাচ্ছে।
এমভি প্রিন্স অব রাসেল লঞ্চের সুপারভাইজার সাইদুর রহমান জানান, রবিবার সন্ধ্যায় লঞ্চটি ঢাকা থেকে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
সোমবার ভোর রাত তিনটার দিকে কালাবদর নদীতে পৌঁছালে ঘন কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।
তখন চরশেফালী লঞ্চ ঘাটে ভেড়ানোর সিদ্বান্ত নেয় মাস্টার।
সুপারভাইজারি আরও বলেন, লঞ্চ ঘাটের চারপাশে জাল ফেলে জেলেরা পন্টুনের পাশে ছিল। লঞ্চ ঘাটে যাওয়ার সময় নদীতে ফেলা জালে লঞ্চের ডান পাশের পাখা আটকে যায়। বাম পাশের পাখা চালু থাকায় লঞ্চ ঘুরে পন্টুনের পাশে জেলে নৌকার ওপর উঠে যায়।
এতে কয়েকটি নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুনেছি দুই জেলে নিখোঁজ রয়েছে।
সুপারভাইজার সাইদুর অভিযোগ করেন, এরপর ৩০/৪০ জন লাঠিসোটা নিয়ে লঞ্চে উঠে মাস্টার মজিবর রহমানকে বেধড়কভাবে পেটায়।
এছাড়াও লঞ্চে ব্যাপক ভাংচুর করে। মাস্টারকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে স্টাফ মাসুদ ও ইলিয়াসকে বেধড়কভাবে মারধর করে। এক পর্যায়ে তাকে (সুপারভাইজার) ধরে নামিয়ে একটি খেতের মধ্যে নিয়ে বেধড়কভাবে পেটানো হয়।
এছাড়াও পাঁচ লাখ টাকা না দিলে তাকে জবাই করারও হুমকি দেয়।
পরে লঞ্চের যাত্রীরা ৯৯৯ এ কল করলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করেছে। তিনি বর্তমানে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
সাইদুর আরও অভিযোগ করেন, পরে এলাকার আরও কয়েক শতাধিক লোক জড়ো হয়ে লঞ্চের তান্ডব চালিয়েছে। তারা লঞ্চের সকল গ্যাস ভাংচুর করেছে। দেড়শ’ কার্টন ফল, নগদ ২০ হাজার টাকা, দুই ব্যারেল ডিজেল লুট করেছে। লঞ্চের তেলের লাইন পিটিয়ে ভেঙে ফেলেছে। এতে বিপুল পরিমাণ তেল নদীতে ভেসে গেছে।
স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহায়তায় ট্রলার ভাড়া করে লঞ্চের দেড়শতাধিক যাত্রীকে গন্তব্যে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে বলেন, এ ঘটনায় মামলা করা হবে কিনা বিষয়টি মালিক ও স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং পুলিশ বসে সিদ্ধান্ত নেবেন।
আরও পড়ুন: বাহামাস উপকূলে অভিবাসী বহনকারী নৌকা ডুবে ১৭ জনের মৃত্যু