নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস, এক ছাত্রের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে গুজবের কারণে অপদস্থ হওয়ার ৪৫ দিন পর বুধবার কাজে ফিরেছেন।
মির্জাপুর কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন চক্রবর্তী বলেন, দুপুর ১২টায় কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা স্বপন কুমারকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন।
এদিকে ২৪ জুলাই কলেজ খোলার পর শিক্ষার্থীরা কলেজে আসতে শুরু করেছে। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কলেজ ক্যাম্পাসে এখনও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ঘটনার পর ৩৬ দিন কলেজ বন্ধ ছিল। গত ১৮ জুন কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
শিক্ষক স্বপন কুমারকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেয়ার সময় নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি, জেলা আ.লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, সদর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন চক্রবর্তী, বিছালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেমায়েত হোসেন ফারুকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর পর বন্ধ কলেজ গত ২৪ জুলাই খোলা হয়েছে। দীর্ঘ এক মাস পাঁচদিন পর কলেজ খোলা হয়। কিছুদিন দ্বাদশ শ্রেণি’র শ্রেণিপাঠ কার্যক্রম চলানোর পর প্রথম বর্ষের ক্লাস চালু করা হয়।
মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন কুমার চক্রবর্তী জানান, গত ১৩ জুলাই বিকালে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভা হয়েছে। সভায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন না। তারপরও ২০ জুলাই কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। পরে সে সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। পরবর্তীতে রবিবার কলেজ খোলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মিজার্পুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র রাহুল দেব রায় গত ১৭ জুন ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার একটি ছবি দিয়ে তার সমর্থনে লেখে ‘প্রণাম নিও বস নূপুর শর্মা, জয় শ্রী রাম’। পরদিন ১৮ জুন রাহুল দেব রায় কলেজে গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠে। তাৎক্ষণিক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস তাকে পুলিশে দেন।
পুলিশ তাকে নিয়ে যেতে গেলে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা বাঁধা দেয়। এরই মধ্যে কে বা কারা গুজব ছড়িয়ে দেয় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওই ছাত্রকে সমর্থন দিয়েছেন, তার কোন বিচার করতে চাননি। গুজবে এলাকার সাধারণ মানুষ কলেজে এসে বিক্ষোভ করে। এমনকি কলেজে প্রশাসনের সামনেই শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে অপদস্থ করে। মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করা হয়। শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেয়া হয়। হুমকি দেয়া হয় শিক্ষকদের। মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র ক্ষোভ।
আরও পড়ুন: নড়াইলে শিক্ষক লাঞ্ছনা: বিচারিক তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
এ ঘটনায় ১৭ জুলাই উচ্চ আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়। ইতোমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর পৃথক দু’টি তদন্ত সম্পন্ন করেছে। তদন্ত শেষে কলেজের জিবি এবং কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আকতার হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
কলেজে হামলা ও শিক্ষক হেনস্থার ঘটনার ৯ দিন পর গত ২৭ জুন দুপুরে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন পুলিশের উপপরিদর্শক ও মির্জাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মোরছালিন। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় এ পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অধ্যক্ষ হেনস্থা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর থানার ওসি (চলতি দায়িত্বে) মো. মাহামুদুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত মোট ৯জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা সবাই হাজতে। এর মধ্যে মির্জাপুর কলেজেরই ছাত্রই রয়েছেন চারজন। এসব ছাত্ররা হলো মির্জাপুর গ্রামের মেজবাউর রহমানের ছেলে সাব্বির রহমান, আফজাল শেখের ছেলে রিপন শেখ রিপু, রহমান শেখের ছেলে রায়হান শেখ ও চুনখোলা গ্রামের আফসারুল কাজীর ছেলে জহিরুল কাজী।
এদিকে অভিযুক্ত পোস্টকারী কলেজ ছাত্র রাহুল এখন হাজতে।
আরও পড়ুন: নড়াইলে অধ্যক্ষ হেনস্তা: ১ শিক্ষক ও কলেজ পরিচালনা পরিষদকে শোকজ