হিলি থেকে সাত কিলোমিটার পূর্বে জামতলী ও উদয়গিরি আদিবাসী পল্লি। এখানে বাস করেন প্রায় দুই হাজারের মতো খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। আর উপজেলায় এ সংখ্যা ছয় থেকে সাত হাজারের মতো।
আরও পড়ুন: শুভ বড়দিন আজ
বড়দিনের আগের দিন বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে প্রধান সড়ক থেকে নেমে উদয়গিরি গ্রামের প্রবেশমুখে গিয়ে দেখা যায় কয়েকজন শিশু শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি ছোট ট্রলি থেকে মাটি নামাচ্ছে। তাদের একজন জনি। এখানে কী করছে জানতে চাইলে সে বলেন, ‘মাটি নামানোর কাজ করছি। কাল ২৫ ডিসেম্বর, আমাদের বড়দিন। কিন্তু আব্বা নতুন জামা কিনে দেয়নি। তাই বন্ধুদের সাথে মাটি নামাচ্ছি, মাটির লোক আমাকে বড়দিনের জামা কিনে দেবে। আব্বা কোনো কাজ পায় না। তাই আমি কোদাল দিয়ে মাটি নামাচ্ছি।’
উদয়গিরি আদিবাসী পল্লির এমন অনেক শিশুর কপালেই বড়দিনের নতুন জামা মেলেনি।
আরও পড়ুন: বড়দিন উপলক্ষে ২৫৪ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে ১৩৭ কোটি টাকা বিতরণের সিদ্ধান্ত
ওই গ্রামের মধ্যবয়সী সুশীল বলেন, ‘গত ৭-৮ মাস ধরে বসে আছি। কোথাও তেমন কাজ পাই না। পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। বড়দিনের কোনো কেনা-কাটা করতে পারিনি। ছেলে-মেয়েরা আবদার করলেও তাদের নতুন জামা-কাপড় দিতে পারিনি। করোনা আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে।’
ছাত্রী ইশা টপ্প ও বর্ষা মিনজি জানায়, এবার নতুন জামা, পুতুল ছাড়াই বড়দিন পালন করতে হচ্ছে। তাদের ৫-৬ সদস্যের পরিবারে ঠিকমতো আহারও জুটছে না। তাদের কেউ ভালো নেই।
‘তাহলে আপনিই বলুন কী করে উৎসব হবে,’ প্রশ্ন তাদের।
আরও পড়ুন: বড়দিনে ঘরেই বানান মজার ফ্রুটকেক
জামতলী ও উদয়গিরির পাশাপাশি চন্ডিপুর, দক্ষিণ বাসুদেবপুর ও মংলা আদিবাসি পল্লি ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার শত শত মানুষ করোনার কারণে কাজ হারিয়ে পরিবার নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এদের কেউ কেউ এদিক-ওদিক করে কোনোমতে যাই পাচ্ছেন তাই দিয়ে সংসারের আহার জুটাচ্ছেন। বড় উৎসবের দিনেও সব আনন্দই যেন তাদের ফিকে হয়ে গেছে।
করোনার থাবায় এদের কারও কারও কর্মজীবন থমকে গেছে। অনেক দিন ধরে তারা কর্মহীন হয়ে আছেন। পরিবারের ছোট শিশুদের উৎসবের সময়ে নতুন জামা, পুতুল বা কোনো উপহারই দিতে পারেননি তারা। ছোট ছেলে-মেয়েরা মন খারাপ করে থাকলেও শান্তনা দেয়া ছাড়া কোনো উপায়ন্তর দেখছেন না পরিবারের হতভাগা অভিভাবকরা।
আরও পড়ুন: বড়দিন, নতুন বছর উপলক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেয়া হবে:ডিএমপি কমিশনার