পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজের জন্য ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ট্রেন চলাচল রবিবার (৪ ডিসেম্বর) থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় গত বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে,‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেণ্ডারিয়া অংশে তিনটি পৃথক রেল লাইনে নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী সকল ট্রেন রবিবার (৪ ডিসেম্বর) থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।’
ওই কাজ শেষে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে রেলপথ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তবে বিজ্ঞপ্তিতে কোনো সময় উল্লেখ করা হয়নি।
রেল কর্মকর্তাদের ধারণা, অন্তত সাড়ে তিন মাস সময় এ কাজে লাগতে পারে। যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: রানিং স্টাফরা ধর্মঘটে, সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ
প্রসঙ্গত, কমলাপুর স্টেশন থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লাইন এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের রেললাইন পাশাপাশি গেছে গেণ্ডারিয়া পর্যন্ত। সেখান থেকে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের লাইন কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, মাওয়া, পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন দিয়ে যশোর পর্যন্ত যাবে। ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণে ব্যয় হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লাইনও ডাবল লাইন ও ডুয়েল গেজে রূপান্তরের কাজ চলছে, সেজন্য সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
অর্থাৎ, কমলাপুর থেকে গেণ্ডারিয়া পর্যন্ত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনটি ডুয়েলগেজে উন্নীত হবে এবং পাশে আরেকটি নতুন ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ করা হবে।
এখনকার লাইনের আরেকপাশে আরেকটি ডুয়েলগেজ লাইন হবে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে জন্য। ১২ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে প্রতিদিন ২৬টি ট্রেন চলে। তাতে পাশাপাশি দুই নগরে যাতায়াত করেন ৩০ হাজারের মত যাত্রী। ট্রেন বন্ধ থাকলে সেই চাপ পড়বে সড়কে।
এদিকে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় ক্ষোভ জানাচ্ছে যাত্রীরা। অনেকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দপ্তরে স্মারকলিপি দিতে চাইছেন। কেউ কেউ বলছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে পাগলা পর্যন্ত চালু রাখার কথা। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া অংশে তিনটি পৃথক রেল লাইনের নির্মাণ কাজ চলায় পথটি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
একটি সূত্র বলছে, তিন থেকে সাড়ে তিন মাস বন্ধ থাকতে পারে এই রেলপথ। নারায়ণগঞ্জের এই পথে বর্তমানে প্রতিদিন ৯টি ট্রেনে ১৮ হাজারের বেশি যাত্রী আসা যাওয়া করে। এখন থেকে সেই যাত্রীদের চলাচলের রাস্তা হবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড। কিন্তু সেই পথেও চলছে সংস্কার কাজ। এতে ভোগান্তি বাড়বে কয়েক গুণ, বাড়বে ব্যয়ও।
সুমন বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি জানান, এই পথের অনেকেই বিনা টিকেটের যাত্রী ছিল। ট্রেনে ১৫ টাকা ভাড়া দিতে চায়নি, এখন তাদের ৫৫ টাকা টিকেট নিয়ে গাড়িতে উঠতে হবে। এছাড়া দুর্ভোগ তো থাকবেই।
সংবাদ মাধ্যমে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো.শরিফুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া অংশে তিনটি পৃথক রেল লাইনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রটে চলাচলকারী সব ট্রেন ৪ ডিসেম্বর রবিবার থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। দ্রুত কাজ শেষে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
রাজ রাজ্জাক নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা যারা ঢাকা টু নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেনে চলাচল করি, আমাদের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দপ্তরে স্মারকলিপি দেয়া উচিত। ঢাকা টু নারায়ণগঞ্জ এর কয়েক হাজার যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে ট্রেন চলাচল বন্ধ না করলে ভালো হয়।’
মোহাম্মদ আল মামুন নামের এক যাত্রী বলেছেন, পুরো রুট বন্ধ না রেখে নারায়ণগঞ্জ টু পাগলা বা শ্যামপুর পর্যন্ত চালাতে পারতো।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে ক্রেন উল্টে লাইনে: ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ