রায়ে ছয়জনকে ১০ বছর করে, চারজনকে পাঁচ বছর করে এবং একজনকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর অপরাধ প্রমানিত না হওয়ায় তিনজন বেকসুর খালাস পেয়েছে।
আদালতের বিচারক হাফিজুর রহমান মঙ্গলবার বেলা ১টায় এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় হাজতে থাকা ছয় এবং জামিনে থাকা আট কিশোর উপস্থিত ছিল।
অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের মধ্যে ১০ বছর করে দণ্ড পেয়েছে রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজী (১৭), রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার (১৫), আবু আবদুল্লাহ ওরফে রায়হান (১৬), ওলিউল্লাহ ওরফে অলি (১৬), নাইম (১৭) ও তানভীর হোসেন (১৭)।
পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড হয়েছে জয় চন্দ্র সরকার ওরফে চন্দন (১৭), নাজমুল হাসান (১৪), রাকিবুল হাসান নিয়ামত (১৫) ও সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিবুল্লাহ’র (১৭)।
তিন বছরের দণ্ড পেয়েছে প্রিন্স মোল্লা (১৫)। আর রাতুল শিকদার জয় (১৬), আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ (১৬) ও মারুফ মল্লিক (১৭)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়নি।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছে, নিহত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বেপরোয়া চলাফেরা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের সাথে প্রত্যক্ষভাবে হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছে দণ্ডপ্রাপ্ত কিশোর অপরাধীরা।
পারিবারিক শিক্ষার অভাব, নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাবের কারণে এসব কিশোর অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। শিশু আইনে শাস্তি কম থাকার কারণে অনেক শিশুই অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে। আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রমাণিত অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা না দিলে দেশে কিশোর অপরাধ এবং কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এ বিবেচনায় ছয়জনকে শিশু আইনে সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করা হয়েছে, জানায় আদালত।
তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতির বিষয় আদালত বলেছে, শিশু অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার সাথে সাথে বয়স প্রমাণ করার যে আইন রয়েছে তা তদন্তকারী কর্মকর্তা পালন করেননি।
এছাড়া, দণ্ডপ্রাপ্ত কিশোর আসামিদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠালে সেখানে অবস্থানরত শিশু-কিশোররা আতঙ্কিত হতে পারে বিবেচনায় তাদের কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষ, নিহত রিফাতের পরিবার ও বরগুনার সচেতনমহল এ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। অপরদিকে, আসামিদের পরিবার ও আইনজীবীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানিয়েছেন।
গত ৮ জানুয়ারি ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বরগুনার শিশু আদালত। মোট ৬৩ কার্যদিবসে বিচারিক কার্যক্রম শেষে ১৪ অক্টোবর আদালত রায়ের জন্য আজ দিন ধার্য রেখেছিল।
এর আগে, এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামিদের রায় ঘোষণা করা হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। রায়ে মিন্নিসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান।
গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে (২২) গুরুতর আহত করে। আহত রিফাত বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই দিনই মারা যান।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় রিফাতের স্ত্রী মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে ১ সেপ্টেম্বর বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুই ভাগে বিভক্ত অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। একই সাথে মামলার এক নম্বর আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।