বরগুনা
বরগুনায় মাজার ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, আহত ২০
বরগুনার আমতলীর ইসমাইল শাহ মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
রবিবার (১৬ মার্চ) দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে বটতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে সোলায়মান, রেজাউল, বাদল মৃধা, দুলাল মৃধা, আবু বকর, আবুল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল নোমান, মো. মামুন, আবুল কালাম, জোবায়ের ও ফজলুল করিমকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানন, বরগুনার আমতলীর ইসমাইল শাহ মাজারে ২৮তম ওরশ গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় শুরু হয়। ওইদিন রাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে তাদের শতাধিক সমর্থক ও জনতা এসে মাজার কর্তৃপক্ষকে মাজার পুজা ও গান বাজনা বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু মাজারের প্রধান খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল ওরশ বন্ধে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথাবার্তা চলাকালীন এক পর্যায় তার সমর্থক ও কিছু জনতা লাঠিসোটা নিয়ে মাজারে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ওই ওরশে আসা হাজার হাজার ভক্ত ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত পৌনে তিনটায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আরও পড়ুন: নরসিংদীতে মাজার ভাংচুরের প্রতিবাদে মানববন্ধন
খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ততক্ষণে মাজারের দুইটি বৈঠকখানা ও মাজারের মধ্যে সামিয়ানা পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রাসেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, ‘আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী শাখার সভাপতি ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে শতাধিক বিক্ষুব্ধ জনতা লাঠিসোঠা নিয়ে এসে মাজার ভাঙচুর করে। পরে মাজারে আগুন দেয়।
ইসমাইল শাহ মাজারের প্রধান খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলের দাবী, মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী ও গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে তাদের শতাধিক সমর্থক লাঠিসোঠা নিয়ে এসে অতর্কিতভাবে মাজারে হামলা চালায় ও আগুন দেয়। এতে মাজারের ভেতরের গিলাব ও দুটি বৈঠকখানা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তারা ভক্তদের মারধর ও মাজারের বাক্সে থাকা টাকা পয়সা লুটপাট করেছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমতলী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদ বলেন, ‘মুফতী মাওলানা ওমর ফারুকসহ আমাদের বেশ কিছু সমর্থক ও বিক্ষুব্ধ জনতা গিয়ে মাজারের প্রধান খাদেমকে পবিত্র রমজান মাসে মাজার পূজা ও গান-বাজনা করতে নিষেধ করেন। কিন্তু তিনি তা মানতে নারাজ। এক পর্যায় তার ভক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদীর গায়ে হাত তুলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এতে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে মাজারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।’
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে মাজারটিতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
২৭ দিন আগে
বরগুনায় নিহত মন্টুর ১৮ মাসের শিশুর দায়িত্ব নিলেন জামায়াত আমির
বরগুনায় মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলার পর হত্যার শিকার মন্টু চন্দ্র দাশের ১৮ মাস বয়সী শিশুর দায়িত্ব নিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
সোমবার (১৭ মার্চ) সকালে পৌরশহরের কালিবাড়ী কড়ইতলায় মন্টু দাশের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। এসময় মন্টু চন্দ্রের স্ত্রীর সঙ্গে তাদের দৈনন্দিন দুঃখ-কষ্টের কথা শোনেন জামায়াত আমির।
ডা. শফিকুর রহমান এসময় নিহতের পরিবারকে বিভিন্ন রকমের ফল ও ঈদ সামগ্রীসহ নগদ টাকা উপহার দেন।
আরও পড়ুন: আজহারকে মুক্তি না দিলে নিজেকে গ্রেপ্তারের আর্জি জামায়াত আমিরের
নিহত মন্টু দাসের দেড় মাসের ছোট শিশু কন্যাটিকে কোলে নিয়ে তিনি বলেন, এই কন্যা শিশুটির বয়স ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের সকল ধরনের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা আমরা করব। আপনাদের সব রকম সহযোগিতা করার জন্য আমরা আপনাদের পাশে থাকব।
জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান সকাল ১০টার দিকে হেলিকপ্টারে বরগুনা সার্কিট হাউস মাঠে নেমে নিহত মন্টু দাস ও ধর্ষিতা নন্দিনী দাসের বাড়িতে সমবেদনা জানাতে যান।
পরে বরগুনা শহীদ মিনার চত্বরে পথসভায় তিনি বলেন, বরগুনার আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও তার বাবাকে হত্যার এ ঘটনায় মামলার রায় ৯০ দিনের মধ্যে কার্যকর করতে হবে। কিন্তু সতর্ক করে দিতে চাই, এটা ৯১ দিন হলে আমরা মানব না।
বরগুনা ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বাবাকে হাড়ানো শিশুটির পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন জমায়াত প্রধান।
এ সময় তিনি তাদের মেয়েদের লেখাপড়া এবং সংসারের অন্যান্য খরচের ব্যবস্থা করাপর জন্য কিছু সহায়তা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন এ জন্য মন্টুর স্ত্রী শিখা রানী দাশকে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার পরামর্শ দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, অ্যাডভোকেট. মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, বরগুনা জেলা জামায়াতের আমির মো. মহিবুল্লাহ হারুনসহসহ অন্যান্য নেতারা।
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জামায়াত আমিরের বৈঠক, অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত
উল্লেখ্য, ১১ মার্চ রাতে বরগুনা পৌর শহরের কালিবাড়ি স্টাফ কোয়ার্টার দীঘির দক্ষিণ পাশে ঝোপঝাড় থেকে মন্টু চন্দ্র দাসের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন নিহতের স্ত্রী অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে বরগুনা সদর থানায় একটি মামলা করেন।
মন্টু চন্দ্র বরগুনা বাজারের একটি মুরগির দোকানের কর্মচারী ছিলেন। তার পরিবারে দেড় মাসের এক কন্যা শিশু, চার বছরের এবং ১২ বছরের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।
মন্টুর পরিবারের দাবি, তার মেয়েকে অপহরণের পর ধর্ষণের অভিযোগ এনে মন্টু বরগুনা থানায় মামলা করার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মন্টুর স্ত্রী আরেকটি মামলা করেছেন। অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত সৃজীব চন্দ্র রায়, তার সহযোগী কালু ও রফিক কারাগারে আছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
২৭ দিন আগে
বরগুনায় ১৪৭ চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত ১৪, যোগদান করেননি ৯ জন
বরগুনা জেলার ৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪৭ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৪ জন। আর ১৪ জন রয়েছেন অনুমোদিত ছুটিতে। চিকিৎসক সংকট নিরসনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জেলায় ১৩ জন চিকিৎসককে পদায়ন করা হলেও যোগদান করেছেন মাত্র ৪জন। এতে জেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা সেবা।
১২ লক্ষাধিক জনসংখ্যার উপকূলীয় এ জেলার চিকিৎসা সেবার ভঙ্গুরতা ও চিকিৎসক সংকট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে বাসিন্দাদের মধ্যে। স্বাস্থ্য বিভাগের যথাযথ জবাবদিহিতা না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তবে সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কঠোরতা অবলম্বন করলে পদায়নকৃত চিকিৎসকরা কর্মস্থলে যোগদান করতে বাধ্য হতো।
প্রায় ২ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপকূলীয় জেলার সর্বস্তরের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক ও জনবল পদায়নের দাবিতে বহু আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন বাসিন্দারা। কিন্তু কোনো প্রতিকার ও পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
জেলার ৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিভিল সার্জন অফিসে মোট ১৪৭ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২৮ জন। এর মধ্যে আবার ১৪ জন অনুমোদিত ছুটিতে থাকায় বর্তমানে কর্মস্থলে আছেন মাত্র ১৪ জন চিকিৎসক। এর উপর আবার রয়েছে অন্যান্য জনবলের সংকট।
বরগুনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর জেলায় ১৩ জন নতুন চিকিৎসককে পদায়ন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু, তাদের মধ্যে যোগদান করেছেন মাত্র ৪ জন। আর বাকীরা এখনো যোগদান করেননি। এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি চালাচালি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি।
জেলার পাথরঘাটা উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কাগজে-কলমে কর্মরত মাত্র ৪ জন। তাদের মধ্যে আবার ২ জন আছেন অনুমোদিত ছুটিতে। এছাড়া বাকি দু’জনের মধ্যে একজন এম. এস. রেসিডেন্সি কোর্সে যাবেন। বাকী একজন দিয়ে চলবে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
বামনা উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কাগজে-কলমে কর্মরত ৫ জন। কিন্তু একজন অনুমোদিত ছুটিতে এবং আরেকজন যাবেন এমডি কোর্সে। বেতাগী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৭ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কাগজে-কলমে কর্মরত আছে ৫ জন। তার মধ্যে একজন অনুমোদিত ছুটিতে, একজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংযুক্তিতে কর্মরত এবং আরেকজন এমডি কোর্সে যাবেন। আমতলী উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৯ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কাগজে-কলমে কর্মরত ৪ জন। যার মধ্যে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে এবং আরেক এমডি কোর্সে যাবেন। তালতলী উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জনের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২ জন। এছাড়া বরগুনা সদর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ১৩ জনের বিপরীতে ৭ জন থাকলেও তাদের মধ্য থেকে ৪ জন বরগুনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্তিতে কর্মরত এবং সিভিল সার্জন অফিসের ২ জন মেডিকেল অফিসারের স্থলে আছেন মাত্র একজন।
গেল বছরের ১৮ ডিসেম্বর বরগুনার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদায়ন করার পরও যোগদান না করা চিকিৎসকরা হলেন- ডা. নুর-ই জান্নাতুল ফেরদৌস, ডা. মো. সাজ্জাদ হোসেন, ডা. পথিক বিশ্বাস, ডা. মো. রাকিবুল হাসান, ডা. মানা শায়ন্তা ঘোষ, ডা. রাফসানা রউফ, ডা. মো. ফখরুল ইসলাম চৌধুরী, ডা. মো. সাইফুর রহমান ও ডা. বুশরা নওরীন।
আরও পড়ুন: বাকৃবি: ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক মাত্র ৮ জন
বরগুনা সচেতন নাগরিক কমিটির (টিআইবি) সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, বরগুনায় চিকিৎসক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ চিকিৎসককে পদায়ন করার পরও তারা যোগদান করছেন না। তার দাবি, চিকিৎসকদের যথাযথ জবাবদিহিতার আওতায় আনতে না পারার কারণে এমন সুযোগ নিচ্ছেন তারা।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ বলেন, সুদীর্ঘ বছর স্বাস্থ্য বিভাগে চেইন অব কমান্ড বলে কিছু নেই। যার কারণে ইচ্ছেমত নিয়োগ অথবা বদলির রেওয়াজ চলমান।
তিনি আরও বলেন, সরকারি চাকরি করে সরকারের নির্দেশনা মানবেন না এটা হতে পারে না। এখান থেকে বেড়িয়ে না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের সুফল আসবে না।
বরগুনা সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ চন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘বরগুনা জেলায় চিকিৎসক সংকট তীব্র। এ সংকট কিছুটা কাটিয়ে উঠতে ১৮ ডিসেম্বর ১৩ জন চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ৪জন যোগদান করলেও বাকীরা এখনো যোগদান করেনি। এ বিষয়ে দু’দফায় চিঠির মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বদলি আদেশে ৩ দিনের মধ্যে যোগদান করার কথা থাকলেও তারা এ বিষয়ে গুরুত্ব দেননি। সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী এটা তারা করতে পারেন না।’
আরও পড়ুন: চিকিৎসক-নার্সসহ বিএসএমএমইউয়ের ১৫ জন বরখাস্ত
৭০ দিন আগে
বরগুনায় ছাত্রদলনেতার ছুরিকাঘাতে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ
বরগুনার তালতলীতে পূর্বশত্রুতার জেরে আরাফাত শিকদার নামে স্থানীয় ছাত্রদলনেতার ছুরিকাঘাতে মোটরসাইকেলচালক আরাফাত খান নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে উপজেলার শারিকখালী ইউনিয়নের কচুপাত্রা বাজারে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত আরাফাত খান (২১) ওই ইউনিয়নের বাদুরগাছা গ্রামের জলিল খানের ছেলে ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক খানের ভাতিজা। ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন তিনি।
অভিযুক্ত আরাফাত শিকদার কলারং গ্রামের শহীদ শিকদারের ছেলে ও শারিকখালী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্যসচিব।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গতকাল (শনিবার) রাত ৯টার দিকে কচুপাত্রা বাজারে শহীদ শিকদারের কীটনাশকের দোকানের সামনে থেকে নিহত আরাফাতকে মারধর করেন আরাফাত শিকদার ও তার সঙ্গে থাকা লোকজন। একপর্যায়ে ধারালো ছুরি দিয়ে তার বুকে আঘাত করা হয়।
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে জমি নিয়ে বিরোধ, ছুরিকাঘাতে কৃষকের মৃত্যু
এ ঘটনার পর স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ওই ঘটনার পর কচুপাত্রা বাজারে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করে তালতলী থানা।
থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজালাল বলেন, ‘কচুপাত্রা বাজারে ছুরিকাঘাতে মোটরসাইকেলচালক আরাফাত খান নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলমান। এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ব শত্রুতার জেরে এই ঘটনা ঘটেছে।
৭০ দিন আগে
বরগুনায় খননের পরেও প্রাণ ফিরছে না খাকদোন নদীর
বরগুনা থেকে ঢাকা যাওয়ার একমাত্র নৌপথ খাকদোন নদী। এই পথ দিয়েই ঢাকার উদ্দেশে চলাচল করে সব ধরনের নৌযান। বর্তমানে খাকদোন নদীর বিভিন্ন জায়গায় চর পড়ে নৌপথটি প্রায় বন্ধের পথে।
বর্ষা মৌসুমে এ নদীতে লঞ্চ চলাচলে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থকলেও শীত মৌসুমে পানি কমে যায়। ফলে নাব্যতা না থাকায়, বিশেষ করে ভাটার সময় লঞ্চগুলো বরগুনা পৌরসভার নদীবন্দর ঘাট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। এতে স্বাভাবিকভাবে লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। তবে খাকদোন নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে সমস্যা সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বরগুনা নদীবন্দর কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসন।
বরগুনার খাকদোন নদীর এ নৌরুটকে সচল রাখতে প্রায় প্রতি বছরই বিভিন্ন স্থানে ড্রেজিং বা খনন কাজ করা হয়। এমনকি সারাবছর ধরেই নদীতে ভাসমান অবস্থায় বাধা থাকে ড্রেজিং মেশিন। তবে বিভিন্ন সময়ে নদীতে ড্রেজিং করা হলেও ফিরছে না নদীর নাব্যতা। এতে শীত মৌসুম শুরু হলে ভাটার সময় পানি কমে গেলে লঞ্চসহ বড় নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো বরগুনার নদীবন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারায় পৌরশহর থেকে প্রায় দুই-তিন কিলোমিটার দূরে নোঙর করতে হয়। আবার বরগুনা থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময়ও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়।
খাকদোন নদীতে এমন ড্রেজিং নিয়ে বরগুনাগামী লঞ্চগুলোর বিভিন্ন স্টাফ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
নৌযান শ্রমিকরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার অভাবে ড্রেজিং করার পরও তেমন কোনো সুফল মিলছে না। স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের দাবি, শুধু লোক দেখানো ড্রেজিং করা হয়। ফলে খাকদোন নদীর নাব্যতা ফিরে না।
বরগুনা থেকে ঢাকাগামী পূবালী-১ লঞ্চের মাস্টার মো. হারুন অর রশীদ বলেন, শীত মৌসুমে খাকদোন নদীর নাব্যতা হারায়। এ সময় পানির সংকট দেখা দিলে লঞ্চ নিয়ে ঘাটে যেতে পারি না। নদীতে ড্রেজিং করা হলেও আশপাশের কিছু কিছু খাল রয়েছে যেগুলোতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। যার কারণে ওই খালগুলোর পানি খাকদোন নদীতে নামতে পারে না। এ কারণে স্রোত কমে গিয়ে নদী ভরাট হয়ে যায়। লঞ্চ চলাচল করতে স্বাভাবিকভাবে নদীতে দেড় মিটার পানি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু মাঝেমধ্যে খাকদোন নদীতে এক মিটার পানি থাকে। এ সময় লঞ্চ ঘাট পর্যন্ত পৌঁছাতে না পেরে দূরে নোঙর করে রাখতে হয়। এতে যাত্রীদের ওঠা-নামায় ভোগান্তির সৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই লঞ্চ যাত্রা বাদ দিয়ে ভিন্ন উপায়ে সড়ক পথে যাতায়াত করেন। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহনেও সমস্যায় পরতে হয়। লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এবং নদীর নাব্যতা ফেরাতে দীর্ঘ মেয়াদি ড্রেজিং পরিকল্পনা করতে হবে বলে জানান তিনি।
একই লঞ্চের আরেক মাস্টার মো. আবুল হোসেন বলেন, বড় নদীতে যে গতিতে আমরা লঞ্চ চালিয়ে আসি, খাকদোন নদীর নাব্যতা না থাকায় সেই গতিতে চালাতে পারি না। লঞ্চের গতি কম থাকায় বরগুনা নদীবন্দরে পৌঁছাতে আমাদের দেরি হয়। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ে আমাদেরও লঞ্চ চালাতে কষ্ট হয়। তবে খাকদোন নদীতে যদি সুন্দরভাবে উপযোগী করে ড্রেজিং করা হয় তাহলে আমাদের এ সমস্যা দূর হবে এবং লঞ্চে যাত্রী সংখ্যাও বাড়বে।
লঞ্চের স্টাফ মো. রিপন বলেন, ভাটার সময় যখন নদীর পানি শুকিয়ে যায় তখন লঞ্চ চালিয়ে আমরা ঘাট পর্যন্ত আসতে পারি না। এছাড়া যখন একেবারে পানি শুকিয়ে যায় তখন ঘাট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ঢলুয়া নামক এলাকায় যাত্রী নামাতে হয়। তবে বছরের পর বছর নদীতে ড্রেজিং মেশিন বাধা থাকতে দেখি, কিন্তু কোনো কাজের কাজ হয় না। যদি খাকদোন নদীর ড্রেজিং সঠিকভাবে করা হয়, তাহলে আমরা ঘাট পর্যন্তই যাত্রী নিয়ে আসতে পারব।
বরগুনার স্থানীয় সচেতন নাগরিক মুরাদুজ্জামান টিপন বলেন, খাকদোন নদীতে নামমাত্র ড্রেজিং করা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী ড্রেজিং করা হয় না। ঘাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে লঞ্চ থেকে যাত্রীদের নামতে হয়। অথচ ড্রেজার মেশিন নদীতে থাকলেও তারা নদী খনন করে না। মাঝেমধ্যে যে খনন করা হয় তা কেবল লোক দেখানো।
আরও পড়ুন: মিরপুরের ঝিলপাড় বস্তিতে চলছে মাদক ও অস্ত্রের রমরমা ব্যবসা
বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিটির বরগুনা জেলা শাখার সদস্য আরিফুর রহমান বলেন, খাকদোন নদীতে প্রতিবছর অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করা হচ্ছে। আমরা এই ড্রেজিংয়ের কোনো সুফল পাচ্ছি না। শীত মৌসুমে লঞ্চঘাট পর্যন্ত লঞ্চ আসতে না পারায় ঘাট থেকে অনেক দূরে নোঙর করে রাখতে হয় এবং সেখানেই যাত্রীদেরকে নামানো এবং ওঠানো হয়। ভবিষ্যতে খাকদোন নদীতে ড্রেজিংয়ের সুফল যদি না পাই তাহলে আমরা পরিবেশকর্মীরা খাকদোন নদীর নাব্যতা ফেরাতে বৃহৎ আন্দোলন করব। আমরা সরকারের সু-নজরের মাধ্যমে খাকদোন নদীর অপরিকল্পিত ড্রেজিং বন্ধ করে পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করতে আহ্বান জানাই।
বরগুনা নদীবন্দরের সহকারী বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা সৈয়দ মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, শীত মৌসুমে নদীতে যখন জোয়ার থাকে তখন তেমন একটা সমস্যা হয় না। তবে ভাটার সময় বড় নৌযানগুলোর গতি কমিয়ে চালাতে হয়। এ মৌসুমে খাকদোন নদীর যে নাব্যতা সংকট দেখা দেয় তা সমাধানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই বিআইডব্লিউটিএয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নদীর গভীরতা এবং নদী পরিদর্শন করেছেন। এর পাশাপাশি নদীর নাব্যতা সংকট দূর করতে বন্দর কর্মকর্তা হিসেবে আমাদের ড্রেজিং বিভাগকেও এ বিষয়ে অবগত করেছি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, খাকদোন নদীই বরগুনা থেকে ঢাকা যাওয়ার একমাত্র নৌপথ। এ পথ হয়েই লঞ্চগুলো ঢাকার উদ্দেশে চলাচল করে। বর্তমানে খাকদোন নদীর বিভিন্ন জায়গায় চর পড়ে এ নৌপথটি প্রায় বন্ধের পথে। যদিও এখন পর্যন্ত জোয়ারের সময় লঞ্চ ঘাট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। তবে ভাটার সময় পৌঁছানো একটু কঠিন হয়। আমাদের এই নৌপথটি সচল রাখতে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড, নাশকতার আশঙ্কা
১০৭ দিন আগে
বরগুনায় সেতু ধস: ৬ মাসের সাবরিন জানে না তার মা নেই
সব শিশুর কাছেই মা তার স্বর্গ। কিন্তু ৬ মাসের সাবরিন জানে না, তার স্বর্গ পৃথিবী ছেড়ে সত্যিই চলে গেছে স্বর্গে।
শনিবার বরগুনার আমতলী উপজেলায় হলদিয়া সেতুর ওপর লোহার তৈরি সেতু ভেঙে পড়ার পর কনেযাত্রী বহনকারী মাইক্রোবাস নদীতে পড়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়।
সেই দুর্ঘটনায় সোহেল খানের স্ত্রী রাইতির মৃত্যু হয়। এ দম্পতির ৬ মাস বয়সি কন্যা সাবরিন। এখন মায়ের যত্ন ছাড়া ছয় মাসের শিশু সাবরিনকে কীভাবে বড় করবেন তা নিয়ে চিন্তিত সোহেল।
বেঁচে যাওয়া শিশু সাবরিনের বাবা সোহেল খান জানান, আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে একটি মাইক্রোবাসে ছিল সাবরিন ও তার মা রাইতি। লোহার সেতু ভেঙে মাইক্রোবাসটি যখন নদীতে ডুবে যাচ্ছিল তখন রাইতি কোল থেকে সাবরিনকে খালের উপর ভাসমান কচুরিপানার মধ্যে ফেলে দেয়। পেছনে একটি অটোতে সোহেলসহ দুইজন আত্মীয় ছিল। তারাও পানিতে ডুবে যাচ্ছিল। সোহেল কোনোভাবে সাঁতরে ওপরে উঠে আসতেই কচুরিপানার ওপর তার চোখ পড়ে। দেখেন কচুরিপানার ওপর সাবরিন, সঙ্গে সঙ্গে নিজের সন্তানকে উদ্ধার করেন।
আরও পড়ুন: বরগুনায় পিস্তলসহ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আটক
সোহেল খান আরও বলেন, ‘এভাবে আমার সবকিছু কেড়ে নিল আল্লাহ! ছোট মেয়েটাকে নিয়ে আমি এখন কীভাবে বাঁচব?’
জানা যায়, কনের বাড়ি আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন থেকে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ছেলের বাড়িতে বউ ভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মাইক্রোবাস ও অটোরিকশাযোগে যাচ্ছিলেন কনে পক্ষের লোকজন।
এসময় উপজেলার ৫ নম্বর চাওড়া ইউনিয়ন এবং ৪ নম্বর হলদিয়া ইউনিয়নের সংযোগ সেতু হলদিয়া ব্রিজ ভেঙে একটি মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা পড়ে যায় নদীতে। এসময় মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা দুই শিশুসহ ৯ জন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন- রুবিয়া (৪৫), রাইতি (২২), ফাতেমা (৫৫), জাকিয়া (৩৫), রুকাইয়াত ইসলাম (৪), তাহিয়া মেহজাবিন আজাদ (৭), তাসফিয়া (১৪), ঋধি (৪) ও রুবি বেগম (৩৫)।
এদের মধ্যে রুকাইয়াত ইসলাম ও জাকিয়ার বাড়ী উপজেলার দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামে। অপর নিহত ৭ জনের বাড়ী মাদারিপুর জেলার শিবচর উপজেলার কোকরার চর গ্রামের বাসিন্দা। এরা কনে হুমায়রার মামা বাড়ির আত্মীয়স্বজন।
জীবিত উদ্ধার হওয়া মাহবুব খান জানান, হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রাম থেকে মাইক্রোবাসে শনিবার (২২ জুন) দুপুর ১টার সময় ভাগ্নি জামাইয়ের আমতলীর বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য রওনা দেন। দুপুর আনুমানিক দুইটার দিকে সময় হলদিয়া সেতুর মাঝখানে মাইক্রোবাসটি পৌঁছালে কচুরি পানায় ভর্তি খালে পড়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘এরপর আর কিছুই বলতে পারি না। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে। আল্লায় মোগো বাঁচাইলেও সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে।’
আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস নদীতে ডুবে নিয়ে বিয়ের কনে পক্ষের ৯ জন মানুষ মারা গেছে। নিহতদের আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আমতলী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ভেঙে পড়া সেতু সম্পর্কে জানান, হালকা যান প্রকল্পের আওতায় ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দৈর্ঘ্য ৮৫ মিটার এই লোহার সেতুটি নির্মিত হয়েছিল। প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। ১৯ বছর আগে নির্মিত সেতুটিতে চলাচলে সতর্কতা নোটিশ টাঙানো ছিল। সেতুটির দুই প্রান্তেই গাছে সতর্কীকরণ নোটিশ টাঙানো রয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে, ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ।’ সেটি উপেক্ষা করার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: বরগুনায় সেতু ভেঙে ৯ জন নিহতের ঘটনায় ঠিকাদারের বিচার দাবি
বরগুনায় সেতু ভেঙে কনেযাত্রীবাহী মাইক্রোবাস নদীতে পড়ে নিহত ৯
২৯৪ দিন আগে
বরগুনায় সেতু ভেঙে কনেযাত্রীবাহী মাইক্রোবাস নদীতে পড়ে নিহত ৯
বরগুনার আমতলী উপজেলায় সেতু ভেঙে কন্যাযাত্রীবাহী মাইক্রোবাস নদীতে পড়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে চাওড়া নদীর উপর নির্মিত হলদিয়া হাট সেতু ভেঙে গেলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- রুবিয়া (৪৫), রাইতি (২২), ফাতেমা (৫৫), জাকিয়া (৩৫), রুকাইয়াত ইসলাম (৪), তাহিয়া মেহজাবিন আজাদ (৭), তাসফিয়া (১৪), ঋধি (৪) ও রুবি বেগম (৩৫)।
আরও পড়ুন: সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত
এদের মধ্যে রুকাইয়াত ইসলাম ও জাকিয়ার বাড়ি উপজেলার দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামে। অপর ৭ জনের বাড়ি মাদারিপুরের শিবচর উপজেলার কোকরার চর গ্রামে। লাশগুলো আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।
নিহতদের স্বনজনরা জানায়, কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমির সহকারী শিক্ষক ও উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের মাসুম বিল্লাহ মনিরের মেয়ে হুমায়রা আক্তারের বিয়ের অনুষ্ঠান হয় শুক্রবার। শনিবার আমতলী পৌর শহরের খোন্তাকাটা এলাকার বাসিন্দা হুমায়রার স্বামী ডা. সোহাগের বাড়ি যাচ্ছিলেন কনেযাত্রীরা। হলদিয়া সেতু পার হওয়ার সময় সেতুর মাঝের অংশ ভেঙে মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা নদীতে পড়ে যায়। এতে অটোরিকশায় থাকা যাত্রীরা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও মাইক্রোবাসের যাত্রীরা নদীতে তলিয়ে যায়। মাইক্রোবাসে ১৬ জন ও অটোতে ৩ জন যাত্রী ছিলেন।
খবর পেয়ে আমতলী ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। ততক্ষণে মাইক্রোবাসে থাকা কনে পক্ষের ৯ যাত্রী মারা যান।
মাইক্রোবাসে থাকা সোহেল মিয়া বলেন, ‘মাইক্রোবাসে কনে পক্ষের ১৬ জন যাত্রী বরের বাড়ি যাচ্ছিলাম। হলদিয়া হাট সেতুতে উঠামাত্রই মাঝখান দিয়ে ভেঙে মাইক্রোবাসটি নদীতে পড়ে যায়। আমিসহ ৩ জন সাঁতরে কিনারে উঠতে পেরেছি। পরে স্থানীয় লোকজন, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
একই পরিবারের তিন নিহতের স্বজন আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার কিছুই রইল না। আমার দুই কন্যা ও স্ত্রী মারা গেছে। সব হারিয়ে আমি এখন অসহায়।’
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২
প্রত্যক্ষদর্শী ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপন ও নাসির উদ্দিন বলেন, মাইক্রোবাস ও অটোটি সেতুর মাঝখানে এলে সেতু ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। তাৎক্ষণিক আমরা স্থানীয়দের নিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা চালাই। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ এসে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই ওই ৯ জন মারা গেছেন।
আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
আমতলী ফায়ার সার্ভিসের ওয়ার ইনচার্জ মো. হানিফ বলেন, চার ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও মাইক্রোবাস উদ্ধার করতে পারিনি। উদ্ধার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তারেক হাসান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। উদ্ধার কাজের তদারকি করছি।
আরও পড়ুন: সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রামের যুবক নিহত
২৯৫ দিন আগে
বরগুনায় পিস্তলসহ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আটক
বরগুনার বেতাগী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী নাহিদ মাহামুদ হোসেন ওরফে লিটু সিকদার ও তার গাড়িচালক সজীবকে অবৈধ বিদেশি পিস্তলসহ আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার (১৪ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বেইলি সেতু এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে এই অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন: সিলেটে যুবক খুন, চাচাতো ভাইসহ আটক ৪
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেতাগী শহরের বেইলি সেতুসংলগ্ন এলাকায় পুলিশ চেক পোস্ট বসিয়ে সব যানবাহনে তল্লাশি চালায়। এসময় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থীর গাড়িটি তল্লাশিকালে ড্রাইভারের সিটের পাশে একটি বিদেশি পিস্তল পাওয়া যায়। পিস্তলটি কাপড় দ্বারা পেঁচানো ছিল৷ এসময় পুলিশ অস্ত্রসহ ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটি (ঢাকা মেট্রো গ ১৯-২৬৫০) জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আসন্ন বেতাগী উপজেলা পরিষদ নিবার্চনে দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী নাহিদ মাহমুদ হোসেন লিটু সিকদার। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা স্বপন সিকদার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
বেতাগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, নাহিদ মাহমুদ হাসান ও তার ড্রাইভার সজীবকে জিজ্ঞাসাবাদকালে পিস্তলের কোনো লাইসেন্স বা বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রাখার দায়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী নাহিদ মাহমুদ ও ড্রাইভার সজীবকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে অটোরিকশাচালককে ছুরিকাঘাতে হত্যা, রিকশাচালক আটক
গাজীপুরে হাসপাতালের লিফটে আটকে রোগীর মৃত্যু
৩৩৪ দিন আগে
বরগুনা প্রেস ক্লাব দখলের চেষ্টার মামলায় ৭ আসামি কারাগারে
বরগুনা প্রেস ক্লাব দখলের চেষ্টা ও হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাত আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) দুপুরে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হারুন অর রশিদের আদালত এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বরগুনা প্রেস ক্লাবের অধিকাংশ সদস্য বার্ষিক শিক্ষা সফরে ভারতে থাকার সময় ১৯ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় এক ইউপি সদস্য মাসুদ তালুকদার ও মুশফিক আরিফের নেতৃত্বে বরগুনা প্রেস ক্লাবে হামলা চালায় একটি মহল।
এ ঘটনায় আহত হন বরগুনা প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার সোহেল হাফিজ, যমুনা টেলিভিশনের রিপোর্টার ফেরদৌস খান ইমন ও সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার সাইফুল ইসলাম মিরাজসহ ৭ জন সংবাদকর্মী। পরে এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫০ জনকে অভিযুক্ত করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করে বরগুনা প্রেস ক্লাব।
আরও পড়ুন: জয়পুরহাটে স্কুলের গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের মামলায় প্রধান শিক্ষক কারাগারে
বৃহস্পতিবার আসামিরা হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হারুন অর রশিদ কারাগারে পাঠানো আদেশ দেন।
আসামিরা হলেন- মুশফিকুল ইসলাম (মুশফিক আরিফ), এম হারুন অর রশিদ রিংকু, সগীর হোসেন, শাজনুস শরীফ, আল-আমিন, জাফরুল হাসান রুহান (রুদ্র রুহান) ও রাকিবুল হাসান রাজন খান।
বাদী পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী গোলাম মোস্তফা কাদের ও আসামি পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এ কে এম শফিকুল ইসলাম নেছার।
এ ব্যাপারে বরগুনা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাফর হোসেন হাওলাদার বলেন, বরগুনা প্রেস ক্লাবে হামলার ঘটনার ১৩ দিন পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মামলার ১ নম্বর আসামি মাসুদ তালুকদার। এই স্বাভাবিক মৃত্যুকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা মামলা সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে ওই মহল। এছাড়াও বরগুনা প্রেস ক্লাবের প্যাড ও লোগো ব্যবহার করে আসামিরাসহ বাইরের কিছু সাংবাদিকদের নিয়ে বরগুনা প্রেস ক্লাবের নামে একটি ভুয়া কমিটির ঘোষণা করে।
আরও পড়ুন: চেক জালিয়াতির মামলায় সীতাকুণ্ডের ইউপি সদস্য বাবলু কারাগারে
৩৮১ দিন আগে
বরগুনায় সাংবাদিক নিহতের ঘটনায় ৭ সহকর্মী কারাগারে
১৯ ফেব্রুয়ারি বরগুনা প্রেসক্লাবে হামলায় আরেক সাংবাদিক নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আত্মসমর্পণ করে বরগুনা প্রেসক্লাবের ৭ সদস্যকে কারাগারে পাঠিয়েছে বরগুনার একটি আদালত।
বৃহস্পতিবার আসামিদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে বরগুনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হারুন-অর-রশীদ এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, দায়ের হত্যা মামলায় উল্লেখিত ১৩ জন আসামির মধ্যে ৮ জন বৃহস্পতিবার সকালে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
আরও পড়ুন: বরগুনার সব রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘট চলছে
আদালত আসামি সোহেল হাফিজ, আরিফুল ইসলাম মুরাদ, মো. কাশেম হাওলাদার, সাইফুল ইসলাম মিরাজ, অলিউল্লাহ ইমরান, সোহাগ হাওলাদার ও সগীর হোসেন টিটুর জামিন না-মঞ্জুর এবং অপর আসামি জাফর হোসেন হাওলাদারের জামিন মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, বরগুনা প্রেসক্লাবের অধিকাংশ সদস্য বার্ষিক শিক্ষা সফরে ভারতে অবস্থানরত অবস্থায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় এক ইউপি সদস্য মাসুদ তালুকদার ও কথিত সাংবাদিক মুশফিক আরিফের নেতৃত্বে বরগুনা প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে দখলের চেষ্টা চালায় একটি মহল।
আরও পড়ুন: বরগুনার বজ্রপাতে নদীতে ছিটকে পড়া জেলের লাশ উদ্ধার
এ ঘটনায় আহত হন বরগুনা প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার সোহেল হাফিজ, যমুনা টেলিভিশনের রিপোর্টার ফেরদৌস খান ইমন এবং সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার সাইফুল ইসলাম মিরাজসহ ৭ সংবাদকর্মী।
পরে এ ঘটনায় ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫০ জনকে অভিযুক্ত করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করে বরগুনা প্রেসক্লাব।
আরও পড়ুন: বরগুনায় পিকনিকের বাস খাদে পড়ে ব্যবসায়ী নিহত, আহত ১৮
৩৯৪ দিন আগে