শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার আলীপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার অন্য দুই আসামি হলেন জাহিদুল আলম ও ছাদেকুল ইসলাম।
এর আগে শুক্রবার রাতে ওই শিশুর বাবা বাদী হয়ে সদর থানায় মসজিদ ভিত্তিক গণশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক সাদ্দাম হোসেনসহ ৯ জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে কলেজছাত্রী ‘ধর্ষণের’ অভিযোগে ‘গৃহশিক্ষক’ গ্রেপ্তার
সিরাজগঞ্জে শিশুসহ ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর কলেজছাত্রী ‘ধর্ষণের’ শিকার
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সদর উপজেলার আলীপুর এলাকায় মসজিদ ভিত্তিক গণশিক্ষা কেন্দ্রে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে ওই শিশু। প্রতিদিনের মতো ১১ মার্চ সকালে গণশিক্ষা কেন্দ্রে পড়তে আসে শিশুটি। এ সময় একা পেয়ে গণশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক সাদ্দাম হোসেন শিশুটিকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। পরে শিশুকে উদ্ধার করে তার পরিবার বিষয়টি স্থানীয়দের জানায়।
এক পর্যায়ে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাতেনসহ কয়েকজন মিলে ঘটনাটিকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। এছাড়া শিশুর পরিবারকে মামলা না করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এরপর এলাকাবাসী বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পর শুক্রবার রাতে শিশুর বাবা থানায় এসে মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, ‘শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূল আসামিসহ অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’
দেশের ধর্ষণ পরিস্থিতি
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস্) সম্প্রতি জানিয়েছে, সদ্য সমাপ্ত হওয়া বছরে সারাদেশে ১২ জন গৃহকর্মী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ২০২০ সালে মোট ৪৪ জন গৃহকর্মী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে চারজনকে হত্যা এবং ১২ জনের রহস্যজনক মৃত্য, ধর্ষণের শিকার ১২ জন, শারীরিক আঘাত ও নিপীড়নের শিকার ১২ জন এবং নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে চারজন আত্মহত্যা করেছেন।
এদিকে করোনাকালে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও শিশুদের জনসমাগমের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ে ৭১৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
গত ৯ জানুয়ারি অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২০’ শিরোনামে এ চিত্র তুলে ধরে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)।
শিশু অধিকার বিষয়ক সংবাদের আধেয় বিশ্লেষণ করে প্রাপ্ত তথ্য থেকে সার্বিক চিত্র উপস্থাপন করেন এমজেএফের শিশু সুরক্ষা বিভাগের সমন্বয়ক রাফেজা শাহীন।
পাঁচটি জাতীয় বাংলা দৈনিক এবং তিনটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত শিশু অধিকার বিষয়ক সংবাদ পর্যালোচনা অনুযায়ী, গত বছর ৭১৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে করোনাকালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬২৬ শিশু এবং ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৩৭ শিশুকে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, সদস্য সমাপ্ত ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৭৫ নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০৮ জনকে গণধর্ষণ করা হয়। এর মধ্যে ধর্ষণের পরে ৪৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং অন্য ১২ জন আত্মহত্যা করেছে।
এছাড়াও, মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনটি বলছে যে ১৬১ জন নারীকে যৌন হয়রানি করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১২ জন আত্মহত্যা করেছেন।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে কলেজছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামি গ্রেপ্তার
কুমিল্লায় গৃহ পরিচারিকার কাজ দেয়ার কথা বলে তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ
আসক আরও বলছে, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় তিনজন নারী ও নয়জন পুরুষকে হত্যা করা হয়। এছাড়া ৬২৭টি শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং ২০ জন ছেলেকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে এবং ২১ জন নারী অ্যাসিড আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গত ১৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০’ পাস হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০-এর ৯ (১) ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এখন ওই ধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।
এর আগে, দেশে সম্প্রতি ধর্ষণের ক্রমবর্ধমান ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের অধিবেশন না থাকায় গত ১৩ অক্টোবর ঘৃণ্য এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে এ সংক্রান্ত আইনের (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন) একটি সংশোধনী প্রস্তাব অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছিল।
বিশেষ করে সিলেট এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির মধ্যেই সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছিল।