পিরোজপুরের পিপি খান মো. আলাউদ্দিনকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পিরোজপুরের মূখ্য বিচারিক হাকিম (সিজেএম) আবু জাফর মো. নোমানের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও তাকে হুমকি দেয়ায় আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে রুল জারি করা হয়েছে।
সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ আজ স্বত:প্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দিয়েছেন। পিপিকে আগামী ১৫ নভেম্বর হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে এ বিষয়ে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
এর আগে মূখ্য বিচারিক হাকিম আবু জাফর মো. নোমানকে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খান মো. আলাউদ্দিনের হুমকি ও অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
আারও পড়ুন: জামিন চেয়ে হাইকোর্টে মিন্নির আবেদন
আদালত বলেছেন, ‘একজন পিপির দায়িত্ব আদালতের পরিবেশ সুন্দর রাখতে বিচারককে সহযোগিতা করা। কিন্তু তিনি বিচারকের সঙ্গে বেয়াদবি করেছেন। এটা মেনে নেয়া যায় না।’
রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, পিরোজপুরের পিপি বিচারকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে একদিকে যেমন আইনজীবী হিসেবে অপরাধ করেছেন। আবার পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবেও অপরাধ করেছেন। তিনি বার কাউন্সিলের যে আইনজীবীর আচরণ বিধি আছে সে আচরণ বিধি ভঙ্গ করেছেন। এখন তার বিরুদ্ধে যদি কনটেম্পট হয়, তাহলে জেল হবে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর পিরোজপুরের মূখ্য বিচারিক হাকিম আবু জাফর মো. নোমান পিপির বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের অভিযোগ এনে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে চিঠি দেন।
চিঠিতে তিনি বলেছেন, গত ২৫ জুলাই এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের উপদেষ্টা আসামি মাওলানা মো. হাফিজুর রহমান ছিদ্দীকীর জামিন আবেদনের শুনানি চলছিল। শুনানিকালে দুপুর আড়াইটার দিকে অভিযোগকারী (বাদী) ও আসামি উভয়পক্ষের ২৫/৩০ জন বিজ্ঞ আইনজীবী নিজেদের মধ্যে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে হট্টগোল সৃষ্টি করে স্বাভাবিক বিচারকার্য, জামিনের দরখাস্ত শুনানিতে বিঘ্ন সৃষ্টি করলে আমি এজলাসের পরিবেশ স্বাভাবিক করে শুনানি গ্রহণের স্বার্থে ১৫ (পনের) মিনিট মুলতবি দিয়ে এজলাস থেকে নেমে যায়। একই ভাবে আবারও দ্বিতীয় দফায় ১০ মিনিটের মূলতবি দিয়ে নেমে যান। এর পরে না হওয়ায় অভিযোগকারী (বাদী) পক্ষের নিযুক্ত আইনজীবী সাইদুর রহমান টিটো এবং আসামিপক্ষের নিযুক্ত আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন ও শ ম হায়দার আলীদের তাদের পক্ষের নিয়োজিত আইনজীবী ব্যতীত অন্যান্য আইনজীবীদের কিছু সময়ের জন্য (উল্লেখিত মামলা সমূহের জামিনের দরখাস্ত শুনানির সময়ের জন্য) এজলাসের বাইরে অবস্থান করার অনুরোধ করলে উভয়পক্ষের প্রয়োজনীয় কিছু সংখ্যক আইনজীবী ব্যতীত অন্যান্য আইনজীবীরা কিছু সময়ের জন্য আমার এজলাস কক্ষ ত্যাগ করে বাইরে অবস্থান করেন।
কিন্তু তখন পাবলিক প্রসিকিউটর খান মো. আলাউদ্দিন ও তার সহযোগী কিছু বিজ্ঞ আইনজীবীকে নিয়ে এজলাসে অবস্থান করলে উল্লেখিত মামলা সমূহের নিযুক্ত আইনজীবীরা তাতে আপত্তি করেন। তখন আমি এজলাসের প্রিজাইডিং বিচারক হিসেবে স্বাভাবিক বিচার কার্য পরিচালনার প্রয়োজনে বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর, পিরোজপুর খান মো. আলাউদ্দিনকে অনুরোধ করে বলি আপনি উল্লেখিত মামলা সমূহের বাদী বা আসামি কোনো পক্ষের নিযুক্ত আইনজীবী না এবং উল্লেখিত মামলা সমূহ ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা ও তাতে রাষ্ট্রের কোনো স্বার্থ-সংশ্লিষ্টতা নাই বিধায় আপনি স্বাভাবিক বিচার কার্য পরিচালনায় সহযোগীতার স্বার্থে কিছু সময়ের জন্য এজলাসের বাইরে অবস্থান করেন।
কিন্তু পাবলিক প্রসিকিউটর আমার অনুরোধ উপেক্ষা করে হঠাৎ আমার এজলাসে উচ্চ স্বরে বিভিন্ন মন্দ ভাষায় (ব্যবহৃত ভাষা লেখার অযোগ্য) হুমকি-ধমকি প্রদান করে তার পিপিশিপের কর্তৃত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে আমার বিচার কার্যে (জামিন শুনানিতে) বাধা দেন। তখন পাবলিক প্রসিকিউটর আমাকে এজলাস হতে নেমে যাওয়ার জন্য হুমকি প্রদান করেন এবং এক পর্যায়ে আমাকে গালমন্দ করে জোরপূর্বক আমার বিচার কার্য সাময়িক বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করে হট্টগোল করে এজলাসে কর্মরত কর্মচারীদের ও বিচারপ্রার্থী জনসাধারণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে প্রধান বিচারপতি এই অভিযোগপত্রটি হাইকোর্টের উপরোক্ত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান।
আারও পড়ুন: ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট