প্রায় এক সপ্তাহের বন্যায় বিশুদ্ধ পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে সিলেট নগরীর বাসিন্দাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
শনিবার বিকালে সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ এর অধীস্থ নগরের উপশহরের বিভিন্ন ব্লক, তেররতন, সুবহানীঘাট, যতরপুর, মেন্দিবাগ, চালিবন্দর, মাছিমপুর, ছড়ারপাড় এলাকা তলিয়ে আছে। উপশহরে অবস্থিত বিদ্যুতের সাব স্টেশনও গত পাঁচ দিন ধরে পানির নিচে রয়েছে। এজন্য এলাকাগুলো এখনও অন্ধকারে নিমজ্জিত।
নগরীতে পানি কমার সঙ্গে বন্যাদুর্গত এলাকায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থাও। কোথাও শুধু খাদ্য সংকট, কোথাও সুপেয় পানি ও খাবারের অভাব। হাজারো বাসা-বাড়িতে নেই গ্যাস। এ অবস্থায় অনেকেই মানবেতর দিন পার করছেন। অনেকেই পানিবাহিত রোগে ভুগছেন।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছে নগরীর অভিজাত শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দারা। আটদিন ধরে গোটা উপশহরেই পানি। পাশের যতরপুর থেকে মীরাবাজার পর্যন্ত পানি। সুবহানীঘাটের সব এলাকায় পানি ঢুকেছে। এসব এলাকার অনেকেই বাসা-বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। এখনও কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। একই অবস্থায় নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো। রাত হলেই আতঙ্ক বাড়ে মানুষের। নগরীর মাছিমপুর, ছড়ারপাড় এলাকার লোকজনও পানিবন্দি। ওই এলাকায়ও তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার খেয়ে দিন যাপন করছেন বন্যাকবলিত মানুষ।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যায় মৎস্য সম্পদের ক্ষতি ২ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা
উপশহরে গিয়ে দেখা যায়, গত সোমবার থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এ, বি, সি, ডি, ব্লকের বাসিন্দারা। সঙ্গে বন্ধ রয়েছে গ্যাস সংযোগও। যেসব বাসা-বাড়ি এবং দোকানপাটে বন্যার পানি প্রবেশ করেছিল, তা ধোয়ামোছা করছেন ভুক্তভোগীরা। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে তাদেরকে বেগ পেতে হচ্ছে।
ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, অনেক ব্লকে এখনও কোমর সমান পানি, ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। পানির মটর তলিয়ে গেছে, তাই পানি তুলতে পারছেন না। কিছু কিছু জায়গায় মটর ঠিক থাকলেও বিদ্যুৎ না থাকায় পানি তোলা যাচ্ছে না। অন্তত দেড় ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করলে ট্যাংকি ভরে পানি মজুদ করা যেত। যারা কষ্ট করে ২-৩ লিটার পানি এনে দিচ্ছেন তাতে ৭-৮ জনের পরিবারের পানির অভাব মেটানো সম্ভব নয়।
ঘরে জমে থাকা পানি সেচে ধোয়ামোছা করছেন উপশহর ই-ব্লকের বাসিন্দা ইমা বেগম। তিনি জানান, শুক্রবার রাতেই তার ঘর থেকে পানি নেমে গেছে। তারপরও ঘরে প্রচুর পানি আটকে আছে। এসব পানি শনিবার সকাল থেকে সেচে বের করছেন। ঘর পরিষ্কার করে জীবাণুনাশক স্প্রে প্রয়োগ করবেন বলে জানান।
আরও পড়ুন: নদীর পানি কমায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
সি ব্লকের বাসিন্দা ফাতেহা বেগম জানান, পাঁচদিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। বাসার রিজার্ভ ট্যাংকের পানি শেষ। বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও কখন বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হবে জানি না। কখন বাসার পানির সমস্যা দূর হবে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে মহানগর পুলিশের সহযোগিতায় ‘মানবিক টিম’ নামক সংগঠনের সদস্যরা উপশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসা-বাড়িতে বোতলজাত খাবার পানি ভ্যানে করে সরবরাহ করছেন। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিলেট রেঞ্জ পুলিশের এসপি মো. জেদান আল মুছা, এসএমপি’র মিডিয়া শাখার শফি আহমদ পিপিএম। এছাড়া উপশহরে স্থানীয় কাউন্সিলর এডভোকেট ছালেহ আহমদ সেলিম বিভিন্ন বাসা বাড়িতে বোতলজাত পানি দিচ্ছেন। পাশাপশি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যরাও নেমেছেন সেবা দিতে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ভোগান্তিতে বানভাসিরা